নিজস্ব প্রতিনিধি: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাথার উপর বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে দশ হাজার কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছে। এমনই দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর দাবি, দেশের আইন অনুযায়ী কোনও রাজ্য সরকার যে পরিমাণ ঋণ করতে পারে ইতিমধ্যেই তার সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে তৃণমূল সরকার। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন রাজ্যের কাঁধে ৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের বোঝা রয়েছে। শুক্রবার এই দাবির স্বপক্ষে একটি হিসেব টুইটের মাধ্যমে পেশ করেছেন শুভেন্দু। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ঋণ নেওয়ার হিসেব তুলে ধরেছেন তিনি। যদিও এই হিসেব তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন সেটির উল্লেখ করেননি তিনি। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের মুখপাত্র তাপস রায় এই ইস্যুতে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে পাল্টা বলেছেন, শুভেন্দু কি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর? এ ব্যাপারে তাঁর এত মাথাব্যথা কেন?
৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সেই সময় থেকে চলতি আর্থিক বছরের হিসেব তুলে ধরেছেন বিরোধী দলনেতা। টুইটে শুভেন্দু গ্রাফিক্সের মাধ্যমে দেখিয়েছেন প্রতি বছরে রাজ্যের নেওয়া ঋণের পরিমাণ কীভাবে বেড়েছে। আর তাতেই দাবি করেছেন এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ছয় লক্ষ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে এ সম্পর্কে শুভেন্দু বলেন, রাজ্য সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে দশ হাজার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেছে। সেই ফাইল ইন্টার্নাল ফিনান্সে আটকে রয়েছে নর্থ ব্লকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের উপরই বিষয়টি নির্ভর করে রয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলে তবেই বেতন হবে। অর্থাৎ শুভেন্দু বোঝাতে চেয়েছেন ঋণের টাকা না পেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন ও পেনশন।
স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দুর এই দাবি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এদিনের টুইটে পশ্চিমবঙ্গের অর্থ সচিবের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও ট্যাগ করেছেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর অভিযোগ, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য রাজ্য ঋণ চেয়েছে। কিন্তু সেই টাকা আসলে খরচ করা হবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন এবং ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের জন্য। সেই সঙ্গে শুভেন্দু বিস্ফোরক দাবি করে জানিয়েছেন, রাজ্যে অনেক ভুয়ো সরকারি কর্মী রয়েছেন। আর ‘লক্ষীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে এমন অনেক নাম রয়েছে যাদের টাকা পাওয়া উচিত নয়। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে শুভেন্দুর আবেদন, রাজ্যকে এই ঋণের টাকা দিলে সরকারি কোষাগারের অর্থ অপচয় হবে। আর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক যাতে রাজ্যকে আয় বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরামর্শ দেয়, সেই আবেদনও কেন্দ্রের কাছে করেছেন শুভেন্দু।
শুভেন্দুর এই অভিযোগের যদি সত্যতা থাকে তবে রাজ্য সরকার পরিকাঠামোগতভাবে কথাটা উন্নয়ন করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সিপিএমের দাবি ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। অথচ গত ১১ বছরে সেটা বের হয়ে গিয়েছে ছয় লক্ষ কোটি টাকা। এর জন্য তৃণমূলের দান খয়রাতির রাজনীতিকে নিশানা করেছে সিপিএম। উল্লেখ্য জেলা সফরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপারে আবেদন জানালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাধিক বার স্পষ্ট বলতে শোনা গিয়েছে সরকারের অত টাকা নেই। তাই এখনই বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেওয়া যাচ্ছে না। তাহলে রাজ্য সরকার যে বিপুল ঋণ নিচ্ছে তা কোথায় খরচ হচ্ছে? তবে কি সামাজিক প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার যে খরচ করে থাকে সেই টাকা মেটাতেই নবান্ন ঋণ করতে বাধ্য হচ্ছে? শুভেন্দুর দাবি অনুযায়ী ঋণ থেকেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়া হবে? যদিও রাজ্য সরকারের দাবি বাংলা জুড়ে বিপুল উন্নয়নের যজ্ঞ অব্যাহত। বিরোধীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন দাবি করছে। সবমিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এই ঋণের প্রসঙ্গ অন্যতম চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।