ফের মোদীর নিশানায় ‘কলমধারী’ নকশাল! তবে কী সমালোচনা করলেই জুটবে নকশাল তকমা?

ফের মোদীর নিশানায় ‘কলমধারী’ নকশাল! তবে কী সমালোচনা করলেই জুটবে নকশাল তকমা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিশানায় নকশাল ও মাওবাদীরা। নকশালরা দেশের নিরাপত্তার জন্য যে কত বড় বিপদ নিজের বক্তব্যে সে কথা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন পুলিশ তথা যৌথবাহিনী দিয়ে মাওবাদীদের মোকাবিলা করার কথা শোনা যেত কেন্দ্রের তরফ থেকে। তবে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন কলমধারী এবং বন্দুকধারী, দু ধরনের নকশালবাদই দেশের জন্য ভয়ঙ্কর। তাদের পরাজিত করার ডাক দিয়েছেন তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখে শহুরে নকশাল বা আর্বান নকশালদের কথা একাধিকবার শোনা গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচকদের একাংশকে এভাবেই তাঁকে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে। শুক্রবার ফের মোদির নিশানায় মাওবাদী এবং নকশালরা। হরিয়ানার সুরজ কুণ্ডে সদ্য হয়ে গেল বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন, যা চিহ্নিত হয়েছে চিন্তন শিবির হিসাবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আয়োজিত এই শিবিরে দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মোদির বক্তব্যে উঠে আসে দেশের নিরাপত্তা, শান্তি ও অখণ্ডতা রক্ষার চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার বিষয়টি। তিনি বলেন,”দেশ সম্পর্কে অশ্রদ্ধার পাশাপাশি সমাজের মধ্যে বিভেদ উস্কে দিচ্ছে নকশালবাদীরা। তাদের কেউ বন্দুকধারী, আবার কেউ কলমধারী। এই দুটি দলকেই পরাজিত করতে হবে। আর তাদের নির্মূলও করতে হবে।” সেই সঙ্গে পুলিশের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ,” অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তাদের মোকাবিলা করতে হবে পুলিশকে। আসলে ওদের চেহারায় একটা সরল ভাব রয়েছে। তাই তাদের খুঁজে বের করে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের যে জেলাগুলিতে নকশালদের প্রভাব রয়েছে সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশকে বেশি করে সময় কাটাতে হবে। নকশালদের প্রভাব কতটা বেড়েছে সেটা সেখানে গিয়ে থেকে বুঝতে হবে। তার ভিত্তিতেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে৷”

উল্লেখ্য মাওবাদীরা যে দেশের পক্ষে কতটা বিপজ্জনক সে কথা অতীতে বহুবার শোনা গিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মুখে। তবে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে মাওবাদীরা যেভাবে নিরীহ মানুষের পাশাপাশি পুলিশের উপর আক্রমণ চালাত বা বিভিন্ন নাশকতা মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত, মূলত সেগুলি রোখার ব্যাপারেই বিশেষ জোর দিয়েছিল তৎকালীন ইউপিএ সরকার। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর মুখে অস্ত্রধারীদের পাশাপাশি কলমধারী মাওবাদীদের কথাও শোনা গেল। তাত্ত্বিক নকশাল বা মাওবাদী নেতৃত্বের মোকাবিলার কথা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। তাই শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

বিশেষজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, তবে কি কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে কেউ সমালোচনা করলেই তাঁকে মাওবাদী বা নকশাল বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে? তবে কি প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সমালোচনা শুনতে ভয় পাচ্ছেন বলেই এভাবে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে প্রতিবাদীদের আর্বান নকশাল বলা হচ্ছে? এই চর্চা স্বাভাবিকভাবেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর থেকেই। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে সশস্ত্র মাওবাদীদের থেকেও প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় মূলত উঠে এসেছেন সেই সব বিশিষ্ট মানুষ যারা নিজেদের কলমের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রীর দাবি তাঁরা পরোক্ষে মানুষের মনে মাওবাদী মনোভাবকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। মোদির মতে এই প্রবণতা অত্যন্ত বিপজ্জনক। যদিও বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা, গত আট বছরে বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দেশের সুশীল সমাজ যখনই পথে নেমেছে তখনই তাঁদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ভীমা কোরেগাঁওয়ের ঘটনা থেকে জেএনইউতে সরকার বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্র সমালোচকদের ব্যাপক নিশানা করে টুকরে ‘টুকরে গ্যাং’ বলে আক্রমণ করেছে। একটা কথা আছে, তরোয়ালের থেকে কলমের শক্তি বেশি। তবে কি তাতেই ভয় পাচ্ছে গেরুয়া শিবির? এই প্রশ্ন নতুন করে উঠতে শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর থেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × three =