দুয়ারে নির্বাচন, তার আগে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে এত কেন দুর্নীতির অভিযোগ?

দুয়ারে নির্বাচন, তার আগে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে এত কেন দুর্নীতির অভিযোগ?

নিজস্ব প্রতিনিধি: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। পঞ্চায়েতে শাসক দলকে বাগে ফেলতে এখন থেকেই কোমর বেঁধে নামার পরিকল্পনা করছে বিরোধীরা। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূলকে লড়াই দিতে চেষ্টার ত্রুটি করছে না তারা।  আর দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে যেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, তাতে বিরোধীদের হাত আরও শক্ত হচ্ছে। যেমন ধরা যাক বাঁকুড়ার কথা। দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ার এক তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে। যে ঘটনায় সরগরম গোটা জেলা। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার কোতুলপুরে।

শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অসংখ্য পোস্টার পর্যন্ত দেখা গিয়েছে। ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা তৃণমূল। বিষ্ণুপুরের কোতুলপুর গরুহাটতলা এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পোস্টার পড়াকে ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে যায়। পোস্টারে তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল নেত্রী সঙ্গীতা মালিক ৩৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ব্লক সভাপতি এবং অঞ্চল সভাপতি করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই কথা মতো টাকা সঙ্গীতাদেবীকে দেওয়া হয়। এমনটাই পোস্টারে লেখা হয়েছে। টাকা ফেরত না দিলে বিষয়টি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতিকে জানানো হবে বলেও জানানো  হয়েছে। যদিও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই জেলানেত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বাঁকুড়ার পাশাপাশি নদিয়া জেলা থেকেও একই অভিযোগ উঠেছে দলের এক বিধায়কের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেই নদিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়কে। তবে কি কারণে তৃণমূল বিধায়ককে ওই পদ থেকে সরানো হল তা প্রশাসন স্পষ্ট করে জানায়নি। উল্লেখ্য করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কিছুদিন আগে তৃণমূলের এক কর্মীকে ব্লক সভাপতি পদ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তাঁর কাছ থেকে সাত লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। ওই টাকা নাকি দলের ফান্ডের নাম করে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসান আলি মণ্ডল নামে ওই কর্মীকে সেই পদ দেওয়া হয়নি। এরপরই হাসান আলি কৃষ্ণনগর পুলিশ সুপারের কাছে বিমলেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী হাসানের অভিযোগ, কিছু দিন আগে করিমপুর ২ নম্বর নতুন ব্লক সভাপতির নাম ঘোষণা হওয়ার পর তিনি বিমলেন্দুবাবুর কাছে সাত লক্ষ টাকা ফেরত চাইতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ টাকা ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে তাঁকে নাকি হুমকি দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। এরপরই কৃষ্ণনগর পুলিশ সুপারের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে বিমলেন্দু সিংহ রায় বলেন, সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ। এর কোনও ভিত্তি নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাসান আলি এই অভিযোগ করছেন। টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেব। কারও ইন্ধনে এই অভিযোগ তিনি করে থাকতে পারেন। এই মিথ্যা অভিযোগের জন্য কৃষ্ণনগর পুলিশ সুপার ও করিমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।” সদ্য কাটোয়ার দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যান শিশির কুমার মণ্ডলকে পদ ছাড়তে হয়েছে এক তরুণীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে। সব মিলিয়ে এই সমস্ত ঘটনায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে তা স্পষ্ট। অবিলম্বে এ ব্যাপারে কড়া হাতে রাশ না টানলে পরিস্থিতি যে আরও জটিল আকার নেবে, সেটা বুঝতে পারছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই দলের সংগঠনিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তৃণমূল নতুন কোনও পন্থা নেয় কিনা সেদিকে চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 7 =