নিজস্ব প্রতিনিধি: গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেগুলিকে বিরোধীরা অন্যতম ইস্যু করে ময়দানে নামতে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল বেশ অস্বস্তিকর জায়গায় রয়েছে। আর সেই জায়গা থেকে তৃণমূল চায় রাজ্যবাসীর কাছে যেন ‘ফিলগুড’ পরিস্থিতি বজায় থাকে। সেই লক্ষ্যে সরকারের নজরে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ।
উৎসবের মরশুমের আগে থেকেই জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছিল। এখনও জিনিসপত্রের দাম রীতিমতো আকাশছোঁয়া। এই অবস্থায় কয়েক মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। তার আগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে বিশেষ বৈঠকের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যাতে কমিয়ে সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে আনা যায়, সেই লক্ষ্যেই বৈঠক ডেকেছেন তিনি। সূত্রের খবর আগামী ১৪ নভেম্বর বিকেল চারটের সময় নবান্নে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না, উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা, মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদেরও উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সদস্যরাও সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন। উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকরাও।
আগামী জানুয়ারিতেই নতুন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে। এরপরই চলে আসবে পঞ্চায়েত ভোট। যেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে স্থানীয় ইস্যুগুলি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, মাছ- মাংস থেকে সবজি ইত্যাদি যাতে সাধারণ মানুষ সুলভে কিনতে পারেন সেই লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার বিশেষ বৈঠকের ডাক দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাজারগুলিতে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। নবান্ন মনে করছে শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র জিনিসপত্রের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাই মূল্যবৃদ্ধি আরও বেড়ে গেলে পঞ্চায়েত ভোটে অসুবিধায় পড়বে শাসক দল, এটা সকলেই বোঝেন। তাই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোটা এখন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাই নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই যাতে জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করে সেই লক্ষ্যেই বৈঠকের ডাক দিয়েছেন তিনি।
যদিও নবান্নের প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়েছে কিনা সেটা তাঁদের জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী কোনও নির্দেশ দিলে সেটা যথাযথ ভাবে পালন করাই তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে এটা পরিষ্কার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল কোথাও ফাঁক রাখতে চাইছে না। কারণ তারা জানে গ্রামবাংলার এই নির্বাচনে ফল খারাপ হলে তার প্রভাব পড়বে লোকসভা ভোটে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে গ্রামবাংলার মানুষকে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছে তৃণমূল। তার ফল ভোটবাক্সে পড়বে বলেই দল মনে করছে।