পঞ্চায়েত ভোটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রমাদ গুণছে তৃণমূল, জেলায় জেলায় আরও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ার আশঙ্কা

পঞ্চায়েত ভোটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রমাদ গুণছে তৃণমূল, জেলায় জেলায় আরও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিনিধি: শুধু বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে চলেছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কে টিকিট পাবেন, এলাকায় কার হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে, ইত্যাদি নিয়ে এখন থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিযোগিতার পালা। জেলার ব্লকে ব্লকে তৃণমূলের একাধিক শিবির এখন থেকেই  কোমর বেঁধে নামছে। আর বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ঘটনা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছে তৃণমূল। টেন্ডারের নথিতে উপপ্রধান সই করতে না চাওয়ায় তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে সই করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে।  ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েত। ঘটনাটি নিয়ে তৃণমূলের উপপ্রধান দোলন সাঁতরা নিজের দলেরই পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন যে সমস্ত ঠিকাদার টেন্ডার পাচ্ছেন তাঁদের কাছ থেকে দশ শতাংশ টাকা কমিশন নিচ্ছেন পঞ্চায়েতের একাধিক সদস্য। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। একই ভাবে বীরভূমে তৃণমূলের তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে যেন রক্তের হোলি খেলা চলছে।

বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বহুদিন ধরেই জেলে রয়েছেন। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় বীরভূমে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ব্যাপক মাথাচাড়া দিয়েছে। ফের সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা প্রকাশ্যে এল। সোমবার দুপুরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সাঁইথিয়ার ফুলুর পঞ্চায়েতের বহরাপুর গ্রাম। দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বোমাবাজি চলে। বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হন সাদ্দাম নামে এক যুবক। তাঁকে উদ্ধার করছে পুলিশ। ঘটনার পর এলাকায় যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে ৩০টি তাজা বোমা। এদিকে বোমার আঘাতে  সাদ্দামের ডান হাত এবং ডান পা উড়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে  সাঁইথিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আঘাত এতটাই গুরুতর তাঁকে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে খবর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লোকজন এদিন নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে একটানা বোমা পড়ার আওয়াজ শোনা যায়। প্রবল আতঙ্কে স্থানীয়রা ঘরে ঢুকে যান। কোনও ব্যাপারে ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়েই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে সবাই মনে করছেন। উল্লেখ্য এই প্রথম নয়, এলাকা বা বেআইনি কারবারের দখল কার হাতে থাকবে তা নিয়ে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে বীরভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কিছু দিন আগেই সিউড়ি থানার বাঁশজোড় গ্রামে খুন হন শেখ ফাইজুল নামে এক যুবক। বালিঘাটের দখলদারি নিয়ে বিবাদে ফাইজুলকে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তৃণমূল নেতা কাজল শাহ-সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সময় বীরভূমে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বীরভূমের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মঙ্গলবার বিরসা মুণ্ডার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত একটি সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বীরভূমে ফের যাচ্ছেন ফিরহাদ। আর ঠিক সেই সময় এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। তাই মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেন কিনা সেদিকে চোখ থাকবে সবার।

বীরভূমের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের ঘটনা নিয়েও সমান চিন্তিত শাসক দল। রাজনৈতিক মহল মনে করছে পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে। তাই এখন থেকে কীভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানা যায় সেটা দেখতে হবে দলকে। না হলে পঞ্চায়েতে হাজার হাজার আসনে যারা তৃণমূলের টিকিট পাবেন না তাঁরা গোঁজ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন। স্বাভাবিকভাবেই তাতে বাড়তি সুবিধা পাবেন বিরোধীরা। তাই এই সমস্যা তৃণমূল কীভাবে মেটায় এখন সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + 2 =