কেন টাটা ন্যানো নিয়ে এসেছিলেন টাটা? কারণটা জানালেন খোদ রতন টাটাই

কেন টাটা ন্যানো নিয়ে এসেছিলেন টাটা? কারণটা জানালেন খোদ রতন টাটাই

কলকাতা:  বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি। একটা সময় ছিল, যখন প্রতিটি সংবাদপত্রের পাতা ভরে থাকত টাটা ন্যানোর বিজ্ঞাপন৷ দেশের অটো ইন্ডাস্ট্রিতে সর্বকালের সস্তা গাড়িগুলির মধ্যে একটি হল ন্যানো৷ মাত্র ১ লক্ষ টাকায় চার চাকার গাড়ি বাজারে নিয়ে এসেছিলেন রতন টাটা৷ এই প্রকল্প ছিল তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত৷ টাটার এই ড্রিম প্রজেক্ট চমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে৷ ন্যানো হয়ে  ওঠে ভারতের গাড়ির বাজারে এক মাইল ফলক৷ তাঁর এই প্রকল্পের হাত ধরেই চার চাকার গাড়ি পৌঁছে যায় মধ্যবিত্তের ঘরে৷ 

আরও পড়ুন- ২৬/১১-র আগে ফের বোমাতঙ্ক! ফোনে বিস্ফোরণের হুমকি, আতঙ্কে মুম্বই

এই গাড়ি ঘিরে যতটা উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, ততটা সাফল্য অবশ্য আসেনি৷ এখন আর ন্যানো পাওয়ায় যায় না৷ তবে শীঘ্রই এর একটি ইলেকট্রিক ভার্সান বাজারে আসতে চলেছে৷ টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক মডেলটির সঙ্গে রতন টাটার একটি ছবি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। কিন্ত, জানেন কি  কেন ন্যানোর মতো সস্তা গাড়ি বাজারে নিয়ে এসেছিলেন রতন টাটা? কেন এত কম দামে চারচাকা গাড়ি ভারতীয়দের হাতে তুলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন এই শিল্পপতি? কারণটা জানা গিয়েছে রতন টাটারই একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে৷ সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন টাটা ন্যানো লঞ্চ করার আসল কারণ। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, টাটা ন্যানো নিয়ে আসা হয়েছিল সকলের জন্য। 

ওই পোস্টে রতন টাটা লিখেছিলেন, ভারতের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি সাধারণত দু’চাকার গাড়িতেই অধিক সফর করে থাকে৷ সেখানে সওয়ারির সংখ্যা থাকে কখনও তিন, কখনও আবার চার৷  স্কুটারে মা-বাবার মাঝখানে বসা বাচ্চাগুলিকে স্যান্ডউইচড হতে দেখতাম৷ দেখতাম কী ভাবে বিপদ মাথায় নিয়েই পিচ্ছিল সড়ক দিয়ে ছুটে চলেছেন তাঁরা৷ সেখান থেকেই ভাবনা চিন্তার শুরু৷ তিনি ও তাঁর টিম প্রথমে একটি নিরাপদ স্কুটার বানানোর কথা চিন্তাভাবনা শুরু করে৷ সেখান থেকেই পরবর্তী সময় গাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ যে গাড়ির দাম হবে স্কুটারের মতোই সস্তা৷ যাতে চেপে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে একটি ছোট্ট পরিবার৷

প্রথমে একটা ডুডল তৈরি করেছিল টিম রতন টাটা৷ ডুডলটিতে একটি চারচাকা গাড়ি আঁকা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে কোনও দরজা বা জানলা ছিল না। ছিল একটা কেবিন৷ যাতে সামান্য কিছু বহন করা যায় মাত্র৷ রতন টাটা তাঁর ওই পোস্টেই জানিয়েছিলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত আমি সিদ্ধান্ত নিই, এটি একটি ফোর হুইলার গাড়ি হবে। তেমনই এর ডিজাইন হওয়া উচিত৷ সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল আমার স্বপ্ন৷ ন্যানো তৈরি করা হয়েছিল এই দেশের প্রতিটা মানুষের জন্য৷’’ রতন টাটা বলেছিলেন, ‘‘এটা আম আদমির গাড়ি৷’’

টাটা ন্যামোর প্রজেক্টের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে৷ ২০০৬ সালের ১৮ মে সিঙ্গুরে ছোট চারচাকা গাড়ি তৈরির প্রকল্প ঘোষণা করেন রতন টাটা। ৯৯৭ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয় সরকার৷ এর পর সিঙ্গুর দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল৷ জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতায় সোচ্চার হন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সিঙ্গুর থেকে টাটা প্রকল্প চলে যায় গুজরাতের সানন্দে৷ 

টাটা ন্যানো লঞ্চ হওয়ার পর বহু মানুষের বাড়ির গ্যারাজে জায়গা করে নিয়েছিল এই গাড়ি৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর চাহিদা কমতে থাকে৷ শুরুতে প্রতি বছর ২৫০,০০০ ইউনিট ন্যানো গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল টাটা মোটরস৷ যে লক্ষ্যমাত্রা কোনও দিনই পূরণ হয়নি৷ বিক্রি কমতে থাকায় ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় রতন টাটার এই স্বপ্নের প্রকল্প৷ তবে টাটা ন্যানোর রেকর্ড ৭৪,৫২৭ ইউনিট বিক্রি হয়েছিল ২০১১-১২ সালে৷  

টাটা ন্যানো তৈরি হয়েছিল ৬২৪ সিসি এসএসসি পেট্রোল রিয়ার ইঞ্জিন এবং রিয়ার হুইল কার টেকনোলজিতে৷ ছিল ম্যানুয়াল গিয়ারবক্স, যা ন্যানোকে করে তুলেছিল মধ্যবিত্তের নাগালে সুরক্ষিত গাড়ি৷