পঞ্চায়েতের আগে মুখ্যমন্ত্রীর নয়া জনসংযোগ, লড়াই কঠিন বুঝেই এমন পরিকল্পনা?

পঞ্চায়েতের আগে মুখ্যমন্ত্রীর নয়া জনসংযোগ, লড়াই কঠিন বুঝেই এমন পরিকল্পনা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে বিশেষ ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পঞ্চায়েতের আগে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন, বা কারও ঘরে গিয়ে আহার করছেন। সদ্য এই ছবি দেখা গিয়েছে হাসনাবাদের একটি গ্রামে। বিজেপির দাবি তাদের নেতারা সাধারণ মানুষের আতিথেয়তা গ্রহণ করে তাঁদের ঘরে গিয়ে নিয়মিত আহারে বসেন। তাই তৃণমূল এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে বিজেপিকে অনুকরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে।

গত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল তাদের অধিকাংশ আসনে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাজার হাজার আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা জিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বিনা যুদ্ধে শাসকদলকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নয় বিরোধীরা। তাই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই যে যার মতো পরিকল্পনা করে আসরে নামতে প্রস্তুত হচ্ছে। রাজনৈতিক মহল মনে করে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়বে। একুশের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসনে জেতার পর তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস বহু গুণে বেড়ে যায়। এরপর বিজেপির বহু নেতা, বিধায়ক, সাংসদ দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। সেই সঙ্গে একের পর এক পুরসভা ভোট, বিধানসভা বা লোকসভার উপনির্বাচনে বিজেপিকে কার্যত প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত করে তৃণমূল। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে কড়া টক্কর দিতে প্রস্তুত বিরোধীরা। 

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে দলের তারকা প্রচারক মিঠুন চক্রবর্তী, জেলা সফরে গিয়ে গ্রামবাসীর ঘরে গিয়ে আহার করছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ বিজেপি নেতারা এভাবেই গ্রামবাসীদের ঘরে গিয়ে নিয়মিত মধ্যাহ্নভোজন করেছেন। তখন বিষয়টিকে তৃণমূল প্রবল কটাক্ষ করেছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রী এবার যখন জেলা সফরে গিয়ে গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে আহার করছেন, তখন সেটি নিয়েও পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি।

গেরুয়া শিবির বলছে, এভাবে তাদের অন্ধ অনুকরণ করার চেষ্টা করে লাভ নেই। পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী সব সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান। তাই এটা নতুন কিছু নয়। উল্লেখ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী প্রচার করেন না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। তাই রাজনৈতিক মহল মনে করছে এখন থেকেই সুকৌশলে এভাবেই প্রচার শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই সূত্রেই জেলা সফরে গিয়ে মঞ্চ থেকে শীতবস্ত্র দেওয়ার ঘোষণার পাশাপাশি গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে আহার করে তাঁদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ‘মধ্যাহ্নভোজন পলিটিক্স’ অন্যতম চর্চিত বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেও বিজেপিকে একই ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। আর সেই কারণেই তৃণমূলও এ ব্যাপারে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলি প্রচারে নতুন কি অভিনবত্ব তুলে ধরে সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 3 =