নিজস্ব প্রতিনিধি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সামনে আবাস যোজনা দুর্নীতি কাঁটা! সেই কাঁটায় যে দল ভালই বিদ্ধ হচ্ছে তা স্পষ্ট। বহুদিন বন্ধ থাকার পর কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য টাকা পাঠানোর ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে। এরপর থেকেই জেলায় জেলায় তীব্র অশান্তি শুরু হয়েছে। কার নাম থাকবে, কার নাম বাদ যাবে মূলত এই বিষয় নিয়েই গত এক মাসের বেশি সময় ধরে তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। অভিযোগ তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতাকর্মী ব্যাকডোর দিয়ে নিজেদের বা আত্মীয় স্বজনদের অথবা ঘনিষ্ঠদের আবাস যোজনা প্রকল্পে নাম তুলে দিয়ে টাকা নিতে চাইছেন। সেখানে আবার তৃণমূলের বিপক্ষ গোষ্ঠী তাতে বাধা দিচ্ছে। কোথাও আবার সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আবাস যোজনা দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়ে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পঞ্চায়েত বা বিডিও অফিসগুলির সামনে। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে প্রকল্পে নাম তোলা নিয়ে বিরোধের জেরে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর নেতা অন্য গোষ্ঠীর কর্মীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে এমন অভিযোগ উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে গোটা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল সরকার। আর এ ব্যাপারে আমফান ঝড়ের পর ত্রাণ বিলি নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছিল তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচারের অভিযোগে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের নাম জড়িয়েছে। তাঁদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন৷ রয়েছেন জেলেও। একই ভাবে তৃণমূলের নীচুতলার নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আবাস যোজনা-সহ একাধিক প্রকল্প নিয়ে। আর সেই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের অভিযোগ, ‘তৃণমূলের উপর থেকে নিচু তলার একাংশ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে।’ যদিও শাসক দল এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মাত্রই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিয়েছে। এমনকী প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দলের অপসারিত মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে তারা দ্বিধা করেনি বলে তৃণমূল জোরের সঙ্গে জানিয়েছে৷ দল দূরত্ব বাড়ালেও পার্থ নিজে আছেন তৃণমূলের পাশেই৷ দলের কর্মীদের নর্ববর্ষ ও তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবস নিয়েও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খোদ পার্থ৷ কোটি কোটি টাকায় শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে আপাতত জেলেই রয়েছেন তৃণমূলের একদা শীর্ষ নেতা৷ যদিও পার্থর গ্রেফতারির পরও রাজনীতির চিঁড়ে কিছুতেই ভিজিয়ে উঠতে পারেনি বিরোধী শিবির। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রথম থেকেই যদি কড়া অবস্থান নিত দল, তাহলে আজ গ্রামবাংলা জুড়ে আবাস যোজনা বণ্টন নিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না৷
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে যেভাবে তৃণমূলের নীচুতলার নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে এই সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছে তা দলকে বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছে। এর প্রভাব কি পঞ্চায়েত নির্বাচনে পড়বে? ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু করে দিয়েছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ৷ বস্তুত, গ্রাম বাংলায় দুর্নীতি ইস্যুতে এমন পরিস্থিতি হালফিলহালে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে অহরহ দেখা যাচ্ছে চতুর্দিকে আবাস যোজনা নিয়ে কীভাবে বিক্ষোভ চলছে। ঠিক একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল আমফান ঝড়ের পর ত্রাণ বিলি নিয়ে। বস্তুত তখন থেকেই শাসক দলের একাংশের বিরুদ্ধে ত্রাণ পাইয়ে দেওয়ার নামে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এই নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও হয়৷ আর এই পরিস্থিতিতে আবাস যোজনা নিয়ে যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে তা সামাল দেওয়াটাই এখন শাসক দলের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, সারদা থেকে নারদা, আগেও একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তৃণমূলের ভোটবাক্সে তোমন কোনও প্রভাবই ফেলেনি৷ উল্টে কোথাও কোথাও বেড়েছে জয়ের ব্যবধান৷ তবে ভোটের সময় বুথের মধ্যে ও বুথের বাইরে কতটা শান্তি বিরাজল করে, তা বেমালুন জানানেন বাংলার ভোটদের একাংশ৷ সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন! আপাতত জেলে পার্থ-মানিক-অনুব্রতরা! গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ‘আবাস বিদ্রোহ’!