নিজস্ব প্রতিনিধি: চোখের সামনে দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে একের পর এক দ্রুত গতির ট্রেন। কোনও ট্রেনের বগিগুলি জংলা রঙের, কোনওটা লালচে। দেখলেই বোঝা যায় যে এই ট্রেনগুলি আর পাঁচটা ট্রেনের মতো নয়। আর এই ট্রেনগুলির ভাড়া সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বহুদিন ধরেই প্রিমিয়াম ট্রেনের নামে রেলমন্ত্রক বাড়তি ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এই আবহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পেল সপ্তম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। যার ভাড়া আরও বেশি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তবে কি যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার জন্য রেল টাকা রোজগারের দিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে? অর্থাৎ ফেলো কড়ি মাখো তেল! ট্রেনগুলির ভাড়া অন্তত তেমনটাই বলছে। হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ভাড়া ১৫০০ ও ২৫০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে সাড়ে সাত ঘন্টা। সেই একই দূরত্ব শতাব্দী এক্সপ্রেস যাচ্ছে আট ঘন্টায়। সেটির ভাড়া ১৩৩৫ ও ২৫০৫ টাকা। সেখানে দার্জিলিং মেলে এনজেপি যেতে গেলে থ্রি-এসিতে ভাড়া পড়বে ৯২০ টাকা। স্লিপারে ভাড়া সাড়ে তিনশো টাকা। যেতে সময় লাগবে দশ ঘণ্টার মতো। এছাড়া এনজেপিগামী বাকি ট্রেনগুলির ভাড়া কমবেশি একই। তাই প্রশ্ন এখানেই, পরিকাঠামো উন্নতি করে অন্যান্য ট্রেনগুলিকে আরও কম সময়ে তো এনজেপি নিয়ে যাওয়া যেতে পারত ভাড়া না বাড়িয়েই। অন্যান্য রাজ্যে বন্দে ভারত অনেক দ্রুতগতিতে যায়। তাই শুধুমাত্র বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্যেই তড়িঘড়ি পশ্চিমবঙ্গে চালু করে দেওয়া হল এই ট্রেনটিকে? এই প্রশ্ন তুলছেন ট্রেন যাত্রীরা।
রেলমন্ত্রক জানিয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৭৫টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সেটা যে অতি উত্তম প্রস্তাব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রদীপের নীচেই অন্ধকার থেকে যাচ্ছে না তো? রেল মন্ত্রক কেন শুধুমাত্র প্রিমিয়াম ট্রেনগুলির দিকে বেশি নজর দিচ্ছে? যাত্রী নিরাপত্তা ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কি অন্যান্য ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়? যে বিপুল টাকা রেলের প্রতি বছর প্রিমিয়াম ট্রেনগুলি থেকে ভাড়া হিসেবে আদায় হয়, পরিকাঠামো উন্নয়নে তার কত শতাংশ খরচ হয় তা জানতে চায় দেশবাসী।
বহু বছর হয়ে গেল প্রিমিয়াম ট্রেনগুলির ভাড়া ওঠানামা করে বিমানের মতো। যেমন ধরা যাক শিয়ালদহ থেকে দুরন্ত এক্সপ্রেসে কেউ রাজস্থানের বিকানের যাচ্ছেন। তিনি যদি চার মাস আগে টিকিট কাটেন তবে তাঁর থ্রি-এসিতে ভাড়া পড়বে ২১০০ টাকা। কিন্তু যাত্রার দু- একদিন আগে টিকিট কাটলে তাঁকে দিতে হবে ৩৮০০ টাকা। অন্যান্য ক্লাসের ক্ষেত্রেও একই ধারা প্রযোজ্য। রাজধানী, শতাব্দী ইত্যাদি প্রিমিয়াম ট্রেনে এমনটাই চলছে। এভাবেই রেল বাড়তি কোটি কোটি টাকা রোজগার করে চলেছে। অবাক করার ব্যাপার হল রেলের এই তুঘলকি নিয়মের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক নেতাকেই প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না। সেখানে সাধারণ মানুষ অসহায়। তাঁদের বাধ্য হয়েই বিপুল টাকা খরচ করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাই পশ্চিমবঙ্গে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হতে দেখে অতটা উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই। যাত্রীরা চান পরিকাঠামো উন্নয়ন করে আরও কম ভাড়ায় দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করতে। আর সেটা যতদিন না হচ্ছে ততদিন রেল যে উন্নত মানের যাত্রী পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দেয়, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাবে।