নিজস্ব প্রতিনিধি: খেলতে গিয়ে শিশু বোমা ফেটে জখম হচ্ছে, বা প্রাণ হারাচ্ছে গত কয়েক মাসে এমন ঘটনা আকছার ঘটতে দেখা গিয়েছে। তবে নতুন বছরের প্রথম দিনেই যে এমন ঘটনা ফের ঘটবে তা কেউ ভাবতেও পারেননি। উত্তরবঙ্গের মাথাভাঙায় রবিবার বছরের প্রথম দিনেই বোমা ফেটে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি চতুর্থ শ্রেণির এক শিশু। আহত শিশুর নাম সুজন বর্মণ। নববর্ষের দিন রাস্তায় থাকা কালভার্টের নীচে খেলছিল সে। এরপর সেখানে একটি লুকিয়ে রাখা বোমা দেখে সেটি নিয়ে খেলতে শুরু করে সুজন। আসলে সুজন বুঝতে পারেনি যে সেটি বোমা, ও ভেবেছিল বল। এরপরই বিকট শব্দে ফেটে যায় বোমাটি। তাতে গুরুতর জখম হয়ে সুজন হাসপাতালে ভর্তি। যথারীতি ঘটনাটি নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
অতীতে বহুবার রাজ্যবাসী রক্তক্ষয়ী পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখেছে। আর সেই সন্ত্রাসের বলি হয়েছে অসংখ্য যুবক। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বোমা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। গত দু-তিন মাসের মধ্যে কুলপি, বসিরহাট, মালদা, কাঁকিনাড়া, বীরভূম ইত্যাদি জায়গায় বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে একাধিক শিশু আহত ও নিহত হয়েছে। যে ঘটনাগুলি নিয়ে রাজ্যজুড়ে ঝড় বয়ে যায়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার প্রশাসনিক আধিকারিকদের বলেছেন বোমা-বন্দুক মুক্ত রাজ্য করতে হবে। জেলাভিত্তিক আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় কোথায় রয়েছে তা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। যদিও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়া আর সেটিকে বাস্তবায়িত করার মধ্যে প্রচুর ফারাক রয়েছে। তাই গুটিকয়েক জায়গা থেকে অস্ত্র উদ্ধার হলেও বাংলার কোণায় কোণায় প্রচুর বোমা-গুলি-বারুদ যে মজুত রয়েছে, তা সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আর সেই সমস্ত ঘটনা নিয়ে যথারীতি শুরু হয়েছে চাপানউতোর পর্ব।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করছেন এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হবে। যদিও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বিরোধীরা তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো দূরের কথা, গত পঞ্চায়েত ভোটে হাজার হাজার আসনে বিরোধীরা প্রার্থীই দিতে পারেনি। যদিও এবার রাজ্যে প্রধান তিন বিরোধী দল বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস এখন থেকেই পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলকে কড়া টক্কর দেবে বলে ঘোষণা করেছে। তাই রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, যেভাবে বিরোধীরাও এখন থেকে সুর চড়াচ্ছে তাতে আদৌ পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে তো? তাই পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে করা রাজ্য পুলিশের কাছে রীতিমতো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ চাইছেন রাজ্যকে দ্রুত বোমা-গুলি-বন্দুক মুক্ত করুক পুলিশ। যেভাবে জায়গায় জায়গায় বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত সবাই। তাই সেই কাজে কতটা সফল হবে পুলিশ সেটাই এখন তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।