নিজস্ব প্রতিনিধি: ত্রিপুরায় নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু তার আগেই জোরকদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছে শাসক দল বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুভেন্দু অধিকারী, মিঠুন চক্রবর্তী, লকেট চট্টোপাধ্যায়-সহ বিজেপি নেতানেত্রীরা ত্রিপুরায় গিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। বিজেপির প্রচারে ‘মহাগুর’ মিঠুন চক্রবর্তীর উপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বিরোধীরা। গত বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় বামেদের পুরোপুরি পর্যুদস্ত করে বিজেপি যে ক্ষমতায় আসবে সেটা অনেকেই ভাবতে পারেননি।
আসলে গতবার ত্রিপুরা কংগ্রেসের পুরো ভোটটাই কার্যত চলে গিয়েছিল বিজেপির দিকে। আর সেই কারণেই সিপিএমের কাজটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট হতে চলেছে। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে এই দুটি দলের জোট নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সেই জোটে যদি ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত দল তিপ্রা মোথা যোগ দেয় তাহলে বিজেপির ক্ষমতা ধরে রাখা খুব কঠিন হবে বলেই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। তবে কি সেটা আঁচ করে এখন থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির? এমন চর্চাই শুরু হয়েছে ত্রিপুরা জুড়ে। ত্রিপুরায় বসবাসকারী প্রচুর বাঙালির কথা ভেবে প্রচারে পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় গিয়ে চড়া সুরে বক্তব্য রেখেছেন শুভেন্দু অধিকারী। একাধিক মিছিলে অংশ নেবেন চিত্রতারকা মিঠুন চক্রবর্তী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্ব তো আছেনই। কিছুদিন আগেই ত্রিপুরায় ‘রথযাত্রা’ বা ‘জনবিশ্বাস যাত্রা’র সূচনা করে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রতিটি বিধানসভা ক্ষেত্র দিয়ে সেই ‘রথযাত্রা’ এগিয়ে যাবে। অতিক্রম করবে এক হাজার কিলোমিটার পথ।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরা যখন ৩ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন, তখন কিছুদিন আগেও ত্রিপুরায় সরকারি কর্মীদের ডিএ ছিল আট শতাংশ। কিন্তু তড়িঘড়ি একলাফে ত্রিপুরায় সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা ১২ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বিজেপি সরকার। এখন যা বেড়ে হয়েছে ২০ শতাংশ। আসলে গোটা দেশের মধ্যে ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানকার প্রতিটি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় সরকারি কর্মীদের ভোট। রাজনৈতিক মহল বহুদিন ধরেই লক্ষ্য করে আসছে যে ত্রিপুরায় সরকারি কর্মীরা যেদিকে থাকেন, নির্বাচনী ফলাফল কার্যত সেই দিকেই ঢলে পড়ে। পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর সরকারি কর্মীদের নিয়ে প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি সরকার। কিন্তু অভিযোগ তার বেশিরভাগ পূরণ হয়নি। কিন্তু ভোট বড় বালাই, তাই তড়িঘড়ি নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এতটা মহার্ঘভাতা বাড়িয়ে কিছুটা হলেও মুখ রক্ষা করতে পারল ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে ভোট নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছে গেরুয়া শিবির। তাই এখন থেকেই প্রচারে মিঠুনের মতো মেগাস্টারকে নামিয়ে চমক দিচ্ছে বিজেপি।