নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে ফের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে সংগঠন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে তৃণমূল। গোয়াতে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন তৃণমূলের নজরে রয়েছে মেঘালয় এবং ত্রিপুরা। তবে তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের অঙ্ক যদি বিজেপি তার গুটিকয়েক শরিক দলকে নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তখন মমতাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসানো। এই আবহের মধ্যে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সব রকম যোগ্যতা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অর্থাৎ আগামী লোকসভা নির্বাচনে মমতা প্রধানমন্ত্রী হতেই পারেন, এমনটাই মত তাঁর। যদিও সেক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলিকে একজোট করতে হবে, সে কথাও বলেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই অমর্ত্যের এমন মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন মমতা কি আদৌ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? সেই সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কি রয়েছে? এক কথায় এর উত্তরটা হচ্ছে মমতার পক্ষে কাজটা অত্যন্ত কঠিন। সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলেই ভোট-অঙ্ক বলছে।
বিষয়টা একটু খোলসা করা যাক। গত কয়েক বছরে দেশ জুড়ে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ব্যাপক শক্তিক্ষয় হয়েছে। তা সত্ত্বেও লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ২২৫টি আসনে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হবে। সেখানে অন্য কোনও দলের অস্তিত্ব নেই। সেই লড়াইয়ে কংগ্রেসের ভাল ফল করা মানে তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে দেড়শোর কাছাকাছি চলে যাওয়া। অন্যদিকে কংগ্রেস সেখানে খারাপ ফল করলে বিজেপি ফের একাই ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২-এর কাছে অনায়াসে পৌঁছে যাবে। আর বিজেপির ক্ষমতায় আসা মানে বিরোধীদের সব আশা শেষ। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে না। উল্টোদিকে বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসতে না পারে তার মানে এটাই দাঁড়ায় কংগ্রেসের ফল বেশ ভাল হবে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস একাই দেড়শো আসনের গণ্ডি পেরিয়ে যেতে পারে। তখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসবে। তখন যদি দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ৪২টি আসনেই জয়ী হয়েছে, তা সত্ত্বেও কংগ্রেস নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে দেবে না।
কারণ সেই সময় সিপিএম তথা বামেরা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, ডিএমকে, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী প্রভৃতি দলের সমর্থন অনিবার্যভাবে কংগ্রেসের দিকেই আসবে। সেখানে তৃণমূল যদি কংগ্রেসকে সমর্থন না করে তাহলে তাদের বিজেপি বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। তখন আপত্তি থাকলেও কংগ্রেসকে সমর্থন করতে বাধ্য হবে তৃণমূল। অর্থাৎ এই সমীকরণ বলছে প্রধানমন্ত্রীর আসনে মমতার বসা বেশ কঠিনই হয়ে দাঁড়াবে। কারণ চল্লিশের ঘরে আসন থাকা একটি দল থেকে কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন এটা নিশ্চয়ই কংগ্রেস মেনে নেবে না। সবচেয়ে বড় কথা গত দু’বছর ধরে কংগ্রেসের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্যে যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী সেখানে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল গিয়ে প্রার্থী দিয়ে ভোট ভাগ করে বিজেপিকে কার্যত সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করছে। এই ইস্যুতে লাগাতার কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ তৃণমূলকে নিশানা করে চলেছেন। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট আগামী লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা বেশ কঠিন হয়েই দাঁড়াচ্ছে।