আজ বিকেল: পুলিশ নামের সঙ্গেই এক ধরনের অপছন্দের ভীতি জড়িয়ে আছে। দেশের আমজনতা দুষ্কৃতী তাণ্ডব সহ্য করলেও পুলিশি অভিযানকে বড়ই অপছন্দ করে। কথায় আছে না, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। তাই বাড়িতে চুরি হলেও পুলিশি জেরা এড়াতে পারলে বেঁচে যায় স্বযং গৃহস্থও। শুধু তাই বা বলি কেন, যদি বাড়ির কোনও তরুণ পুলিশের চাকরিতে আগ্রহী হলে তাতেও বাদ সাধতেন বড়রা। এই ধারণা এখনও অনেকের মধ্যেই রযেছে। এর পিছনে পুলিশও বড় অংশে দায়ী। পুলিশের অসাধু আচরণ নিযে জনসাধারণের মধ্যে ভীতি রযেছে। বিভিন্ন জায়গায় চুরির ঘটনা ঘটলে লুটপাটের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। অনেক সময় লুটেরাদের সঙ্গে আধাআধি বখরা থাকায় অপরাধী সবসময় অধরাই থেকে যায়। তাই পুলিশের পেশাকে সম্মান করে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এই পরিস্থিতিতে সৎ পুলিশকর্তারাও অসম্মানের ভাগীদার হয়ে যান অন্যান্যদের জন্য। তাই নিজের এলাকায় নতুন কোনও বড় কর্তা দায়িত্ব নিয়ে এলে ভরসার থেকে বিরক্তিই বেশি লাগে। মনে হয় ফের কেউ জ্বালাতে চলে এল। তবে এই জ্বালানোটা যদি ইতিবাচক কাজের জন্য হয় তবে তা সহনীয় নিশ্চই। ভাল পুলিশকর্তাও যে দায়িত্ব নিয়ে এসে সমাজকে অপরাধ মুক্ত করতে পারে, তা শুধু গল্পেই শোনা যায়। তবে এমন ঘটনাই ঘটেছে আমেদাবাদে। সেখানে নতুন এসিপি হয়েছেন মনজিতা বানজারা। নাম শুনে মনে হয়েছিল, আবার একজন এলেন। তবে দেখার পর চক্ষুস্থির। মনজিতা একজন নারী, রীতিমতো সুন্দরী। রূপে লক্ষ্মী গুনে সরস্বতী। যে সমাজে কন্যাসন্তান জন্মালে প্রসূতির উপরে অত্যাচার শুরু হয়, সেই সমাজে একজন মহিলা পুলিশকর্তা হলে সেই বাবা-মায়ের সামনে মাথা নত করতেই হয়। যে বাবা-মা নিজেদের মেয়েকে এমনভাবে তৈরি করেছেন। সেইসব বাবা-মায়ের সন্তান তো সবসময় অন্যায় প্রতিহত করার চেষ্টা করবে।
মনজিতাও তাই করলেন, আমেদাবাদে ছাড়া সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। অপরাধের শিরোমণি এই ছারাদের এড়িয়ে চলেন অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষরা। এই ছারা পরিবারগুলিতে বেশিরভাগই বিধবাদের বসবাস। এদের স্বামীরা বিষমদের বলি হয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ দেশি মদ তৈরি করেছেন ছারা পরিবারের মহিলারাই। ওটাই তাঁদের মূল জীবিকা। সেই অস্বাস্থ্যকর পানীয় খেয়েই যত বিপর্যয় ঘটেছে। এর স্বামীর মৃত্যুর অপরাধে বেশিরভাগ স্ত্রীরাই জেল খেটেছেন। অনেকে গারদের বাইরে এসে ফের ওই জীবিকাতেই ফিরে যান। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা সবসময় ঘটে না, কেউকেউ জীবনের মূলস্রোতে ফিরতে অন্য কাজের চেষ্টাও করেন। তবে সেই তীব্র জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে তীব্র লড়াইও করতে হয়।ছারা সম্প্রদায় যেমন তাঁকে গ্রহণ করে না, তেমনই বাইরের লোকজনও নয়। তাই অপরাধের কানাগলি ছেড়ে ছারা সম্প্রদায়ের মহিলাদের জীবনের মূল স্রোতে ফেরাতে উদ্যোগী হন এই এসিপি মনজিতা।
বিভিন্ন এনজিও-র সহযোগিতায় ওই মহিলাদের তিনি টেলারিং ও পার্লারের কাজ শেখানোর চেষ্টা করেন। প্রথমে কোনও দলই এদের কাজ শেখাতে উদ্যোগী হয়নি। সবারই ভয় ছিল, সেলাইয়ের জন্য আনা কাপড়া বা মেশিন কিম্বা রূপটানের সামগ্রী চুরি করে নেবে ছারা মহিলারা। তবে অনেক কষ্টে মনজিতা তাঁদের বোঝান এমন কিছুই ঘটবে না। এরপর ছারা মহিলাদের উৎসাহ দিয়ে নিয়ে আসার পালা। সেটিও করে ফেলেন তিনি। একজন পুলিশকর্তার আশ্বাস পেয়ে দলে দলে মহিলারা প্রথম দিনের ক্লাসে আসেন। ছাত্রীর সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে যায়। তবে পরের দিন এক ধাক্কায় সেই সংখ্যা নেমে আসে ছয়ে। এতেও দমে যাননি মনজিতা, উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। শেষপর্যন্ত এক ছাত্রীই টিকে যায়। তিনি কাজ শিখে বিরাট বড় ডিজাইনার না হলেও তাঁর প্রতিবেশীদের বুঝিয়ে এনে সেই টেলারিংযের ক্লাসে ছাত্রীর সংখ্য়া বৃদ্ধি করেন। এসিপি মনজিতা বানজারার বদান্যতায় এখন ছারা মহিলারা আর দেশি মদ নয়, সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেইসঙ্গে চলে পার্লারের কাজও।
এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ভাল পুলিশ শুধু অপরাধি ধরে গারদে নিয়ে যায় না। অপরাধকেই গোড়া থেকে নির্মূল করার চেষ্টা করেন। এই মনজিতা বানজারা তেমনই একজন, যিনি পুলিশের পেশাকে সম্মান করার রাস্তাটি তৈরি করেছেন।