মেঘালয়ে দল ভাঙিয়ে কী লাভ হল তৃণমূলের? উদ্দেশ্যটা ধরা পড়ে যাচ্ছে, কটাক্ষ কংগ্রেসের

মেঘালয়ে দল ভাঙিয়ে কী লাভ হল তৃণমূলের? উদ্দেশ্যটা ধরা পড়ে যাচ্ছে, কটাক্ষ কংগ্রেসের

নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এরপর থেকে বিরোধী দল ভাঙানোটা রীতিমতো যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে তৃণমূল। বিভিন্ন সময়ে বাম-কংগ্রেস-বিজেপির কাউন্সিলর, বিধায়ক, সাংসদদের পাশাপাশি সাংগঠনিক নেতানেত্রীদের নিজেদের দলে টেনে এনেছে তৃণমূল। গত ১২ বছর ধরে এগুলি দেখতে দেখতে বেশ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন রাজ্যবাসী। তবে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ বলে নয়, অন্যান্য রাজ্যেও একই পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলকে। যার অন্যতম উদাহরণ হল মেঘালয়। এক সঙ্গে ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ককে নিজেদের দলে টেনে এনেছিল তৃণমূল। কিন্তু তাতে কতটা লাভ হয়েছে তাদের? মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

মেঘালয়ে তৃণমূল পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেছে। প্রায় সব কটিতেই তারা প্রার্থী দিয়েছিল।  তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার মেঘালয় সফর করেছেন। দাবি করেছেন তাঁরাই সেখানে ক্ষমতায় আসছেন এবং তারপর পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচে মেঘালয়েও একগুচ্ছ সামাজিক প্রকল্প চালু করবেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা, তৃণমূল দুই অঙ্কেও পৌঁছতে পারেনি সেখানে। এতদিন মেঘালয়ে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা কংগ্রেসও পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেছে। কংগ্রেস ও তৃণমূল দুটি দলই ১৩ শতাংশ করে ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ কংগ্রেসকে ভাঙার ফলে তৃণমূল ওই ভোট পেয়েছে। সেখানে কংগ্রেসে ভাঙন না ধরলে তাদের ভোট শতাংশ একক বৃহত্তম দল এনপিপি’র ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলত। অর্থাৎ মেঘালয়ের যে ফলাফল সামনে এসেছে তার অনেকটাই বদলে যেতে পারত।

স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেসের অভিযোগ তাদের দল ভেঙে বিজেপি তথা এনডিএ-কে সুবিধা করে দিয়েছে তৃণমূল। গোয়াতেও একই অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেখানে তারা নিজেরা একটি আসনে জয় না পেলেও বেশ কয়েকটিতে ভোট কেটে হারিয়ে দিয়েছে কংগ্রেসকে।  এখন প্রশ্ন এভাবে আর কতদিন চালাবে তৃণমূল? যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠছে তাতে বিজেপি বিরোধী রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে তৃণমূলের ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার সাগরদিঘিতে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে তৃণমূলের। এরপরই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা কংগ্রেস বা বিজেপি বিরোধী অন্য দলের সঙ্গে জোট করবেন না। অথচ একটা সময়ে তৃণমূল নেত্রী বারবার বলেছেন বিজেপিকে হারাতে হলে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী, এই সমীকরণ মেনে চলতে হবে। অথচ এখন তিনিই বলছেন লোকসভায় তৃণমূল একাই লড়বে। তাই প্রশ্ন, মমতা যদি সত্যিই মন থেকে বিজেপিকে হারাতে চান তাহলে তাঁর কি উচিত বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া? সেক্ষেত্রে তো ভোট কাটাকাটির সুবিধা নিতে পারে বিজেপি। তাই মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, বা দিনের পর দিন তৃণমূলকে বিভিন্ন রাজ্যে যে ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে, তাতে তাঁরা বিজেপিকে হারাতে কতটা আন্তরিক সে প্রশ্ন কিন্তু অবধারিত ভাবে উঠছে। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে এই বিষয়টি নিয়ে ততই যে কাটাছেঁড়া চলবে তা স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =