‘ইন্ডিয়া’ তো হল, ‘অধিনায়ক’ কে? লোকসভা নিয়ে চর্চা বাড়ছে দলগুলির অন্দরেই

‘ইন্ডিয়া’ তো হল, ‘অধিনায়ক’ কে? লোকসভা নিয়ে চর্চা বাড়ছে দলগুলির অন্দরেই

নয়াদিল্লি: ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপি বিরোধী দলগুলি নতুন আঙ্গিকে জোট গঠন করেছে এবং নতুন নামও দিয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে এখন চর্চা যে তুঙ্গে থাকবে তা আলাদা করে বলতে হয় না। রাজনৈতিক নেতারা হোক কিংবা চায়ের দোকানে আড্ডা মারা সাধারণ মানুষ, এই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছেই। বিজেপি তো শুরু থেকেই এর নাম এবং জোটে থাকা দলগুলিকে একহাত নিচ্ছে দুর্নীতি প্রসঙ্গ তুলে, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, কোনও রাজনৈতিক জোটের নাম দেশের নামে দেওয়া যায় কিনা, সে নিয়েও চর্চা। কিন্তু সব বিতর্কের মধ্যেও একটা ‘কমন প্রশ্ন’ যেন চলেই আসছে বারবার। ‘ইন্ডিয়া’ তো তৈরি হল, কিন্তু এই দলের ‘অধিনায়ক’ কে? নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রীর মুখ নিয়ে স্বচ্ছতা এখনও আসেনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে নিয়েই সবথেকে বেশি আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই লোকসভায় নিজেকে প্রমাণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন তিনি এবং তারপর কার্যত কিছু সময়ে রাহুল রাজনীতি থেকে দুরেই সরে গিয়েছিলেন। তবে ২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা ভোটের পর জাতীয় স্তরে একেবারে সামনের সারিতে চলে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে যেভাবে তিনি পর্যুদস্ত করেছিলেন এই নির্বাচনে তাতে তাঁকে নিয়ে আলোচনা না হওয়া অস্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে কি আসন্ন লোকসভায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ হবেন? বিরোধী জোটের মধ্যে কি এই নিয়ে সহমত থাকবে? এগুলিই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। বাকি দলের কথা আপাতত না জানা গেলেও নেত্রীর দল অর্থাৎ তৃণমূল ঢাক-ঢোল পিটিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। 

সম্প্রতি দলের এক সদস্য-সংগঠনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখান থেকে তিনি স্পষ্ট দাবি করেন, আগামী দিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যোগ্য প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনই জিতে দেখিয়ে দিতে হবে তাঁর আসল শক্তি কী। শুধু তিনি এক নন, রাজ্যের অন্য এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও দাবি করেছেন, ইন্ডিয়া তৈরি হয়েছে, লড়াই চলছে। আগামী দিনে মোদী না মমতা জিতবেন এবং তিনিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সবথেকে বেশি যোগ্য। এক কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তাঁকেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মুখ অর্থাৎ আগামী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। যদিও মমতা এর আগে নিজে জানিয়েছেন, তাঁর পদের লোভ নেই, বিজেপিকে হারানোই তাঁদের মূল লক্ষ্য। তবে তৃণমূল যে দাবি তুলেছে তা অবাস্তব না হলেও প্রস্তাব এলে জোটের বাকিরা তা মানবে  কিনা, সেটা বলা দুষ্কর হচ্ছে। কিন্তু ইঙ্গিত যে কিছু মিলছে না তাও নয়। 

ইন্ডিয়ার ফর্মুলা অনুযায়ী, যে যেখানে শক্তিশালী সেই দল সেই রাজ্য এবং নির্দিষ্ট আসনে লড়বে। সে ক্ষেত্রে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৪২টি আসনে কোন দল কোথায় লড়বে তা ঠিক করার ক্ষেত্রে একমাত্র আছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর ওপর কংগ্রেস ভরসা রাখছে বলেই খবর। জানা গিয়েছে, বাংলার সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কোনও আপত্তি করবে না। এই ফর্মুলায় দিল্লি ও পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, ঝাড়খণ্ডে জেএমএম, বিহারে আরজেডি-জেডিইউ আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে। আবার রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল, কর্ণাটক সহ কংগ্রেস যেখানে শক্তিশালী, সেইসব রাজ্যে আসন নির্ধারক হবে কংগ্রেস। যদিও জোটের মুখ যে হবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অমিল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − five =