প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বছরে ২০ লাখ উপার্জন করেন এই কৃষক

শাম্মী হুদা: কৃষি ভারত বর্ষের অর্থনীতির মূল মাপকাঠি হলেও আজকের দিনে দেশের চাষবাসের হাল দৈন্য দশায় পর্যবসিত হয়েছে। এখন কৃষক কৃষিঋণ পায় না, তাছাড়া জমিতে যতটা ফলন হয় লাভ তার থেকে অনেক অনেক কম। যার ফলে ফসল ফলাতে একজন কৃষক যে পরিমাণ টাকা খরচ করেন সেই ফসল বিক্রি করে তার একভাগও উঠে আসে না, লাভ

b57643fc6fe6495074b9aca1889955b5

প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বছরে ২০ লাখ উপার্জন করেন এই কৃষক

শাম্মী হুদা: কৃষি ভারত বর্ষের অর্থনীতির মূল মাপকাঠি হলেও আজকের দিনে দেশের চাষবাসের হাল দৈন্য দশায় পর্যবসিত হয়েছে। এখন কৃষক কৃষিঋণ পায় না, তাছাড়া জমিতে যতটা ফলন হয় লাভ তার থেকে অনেক অনেক কম। যার ফলে ফসল ফলাতে একজন কৃষক যে পরিমাণ টাকা খরচ করেন সেই ফসল বিক্রি করে তার একভাগও উঠে আসে না, লাভ তো দূরের কথা যেটা মূলধন সেটাই বিকিয়ে যায়।

প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বছরে ২০ লাখ উপার্জন করেন এই কৃষকএক কথায় চাষবাস করে প্রকারান্তরে ঋণী হতে হয় কৃষককে, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কৃষক তখন কৃষিঋণের দ্বারস্থ হন ব্যাংক থেকে ঋণ ও পান অনেক সময় কিন্তু ফসল বিক্রি করে লাভ না হওয়ায় সেই ঋণ শোধ করা তার পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে। এদিকে বছর যায় কৃষি ঋণের বোঝা বাড়তে শুরু করে। ফলস্বরূপ ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা অহরহ ঘটে। সেখানে মহারাষ্ট্র হোক বা মধ্যপ্রদেশ চিত্রটা কমবেশি একই। উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখন্ড, রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল। এখানে চাষবাস করাই খুব কঠিন কাজ। এখানকারই বান্দা এলাকার কৃষক প্রেম সিং সেই বাধাকেই জয় করেছেন। এমন একটা সময় ছিল যখন পূর্বপুরুষের এই পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন প্রেম সিং। তবে শেষপর্যন্ত বাবার চাষবাসের পদ্ধতিকেই অবলম্বন করেন, বাকিটা ইতিহাস।

প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বছরে ২০ লাখ উপার্জন করেন এই কৃষকনিজেদের পাঁচ একর জমিতে প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ বাস করবেন এই কথা বলেছিলেন তার অন্য তিন ভাইকে । বলা বাহুল্য কেউই প্রেম সিংকে সমর্থন করেননি, তবুও প্রেম সিং তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। হাজার ১৯৮৮ সালে পাঁচ একর জমির মধ্যে চার একর দিয়ে শুরু হয় তাহার কৃষি কাজের পরিকল্পনা। তিরিশ বছর ধরে তিনি এই কাজ করে চলেছেন, আজ তাঁর বার্ষিক আয় কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকা যার সবটাই আসে ওই জমি থেকেই। কিভাবে করলেন এসব প্রশ্ন তো উঠতেই পারে উঠেছে ও , এবার দেখা যাক প্রেম সিং আদতে করেন টা কি।

প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বছরে ২০ লাখ উপার্জন করেন এই কৃষকএক একর জমিতে তিনি কলা গাছ আম গাছ ও বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছেন, সার হিসেবে ব্যবহার করছেন ওই গাছেরই পচা পাতা। কোনও রাসায়নিক সারের দিকে তিনি তিনি যাননি জৈব সার তৈরির জন্য বেশ খানিকটা জমিতে গরুর গোয়াল করেছেন মুরগির পোল্ট্রি করেছেন সেখানে গোবর দিয়ে মুরগির সার দিয়ে গাছের পচা পাতা এক জায়গায় পচিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট পদ্ধতিতে সার তৈরি করেছেন। সেই সার একই সঙ্গে তাঁর খেতি বাড়ির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ফলের বাগানে ও কাজে লাগছে এগুলির পাশাপাশি তিনি ধান গম ভুট্টা বিভিন্ন মরশুমের সবজি চাষ করেন। তাঁর জমিতেই তিল সর্ষে চাষ হয়।

প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বছরে ২০ লাখ উপার্জন করেন এই কৃষকবলাবাহুল্য, জমির কোনও সবজি তিনি এমনি বিক্রি করেন না। যেমন ধরুন তিল সর্ষে, এর থেকে তেল মশলা তৈরি হয় তাঁর খামার বাড়িতে । তারপর সেসব দ্রব্য প্যাকেট বন্দি হলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। গাছের আম থেকে আচার মোরব্বা তৈরি করে বিক্রি করেন গরুর দুধ বিক্রির পাশাপাশি ছানা, পনির, ঘি মাখন ও চিজ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। এইসব সবজি ও আনুসঙ্গিক দ্রব্যাদি দিয়ে গৃহস্থালির কাজকর্ম ও চলে। বাইরে থেকে শুধু লবন কিনতে হয়। এবার আসি বাসস্থানের কথায়, প্রেম সিং তাঁর গোটা জমিতেই নানারকম কৃষিকাজ করেন, সঙ্গে রয়েছে খামার বাড়ি। সেখানে তাঁর পরিবারের ১৪জন সদস্য থাকেন। সবাই বাড়ির কাজকর্ম করেন। এছাড়া প্রায় ৪০টি পরিবার তাঁর খামারবাড়িতে কাজ করেন সবার খাওয়পরা চলে যায় জমির আয় থেকে। কোনও কংক্রিটের জঙ্গল নেই, নেই কোনও এলপিজি। এখানে বায়ো গ্যাসে রান্না হয়, সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়, তাদিয়েই যাবতীয় কাজ হয়।

প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বছরে ২০ লাখ উপার্জন করেন এই কৃষকপ্রেম সিংয়ের উৎপাদিত ফসল স্থানীয় বাজারেই যায়। তারপর উদ্বৃত্ত থাকলে বাইরে। কেননা স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন এই কৃষক। তাঁর কৃষি পদ্ধতি থেকে হাতে কলমে শিক্ষা নিতে বিদেশের বহু কৃষক বুন্দেলখন্ডে এসেছেন। এছাড়াও কৃষি গবেষক স্কুল কলেজের পড়ুয়াদের জন্য প্রেম সিংয়ের অবারিত দ্বার। তাঁর একটাই বক্তব্য, প্রাচীন পদ্ধতি ফিরিয়ে এনে কৃষিকাজ করুন উন্নতি কেউ আটকাতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *