muizzu
নিজস্ব প্রতিনিধি: এক কথায় যাকে বলে গায়ে পড়ে ঝগড়া করা। ঠিক সেটাই করেছেন মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী। যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে তাঁকে কটাক্ষ করেছেন মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী, তাতে ক্ষুব্ধ গোটা দেশ। চাপে পড়ে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। কিন্তু এতে তাঁদের ক্ষতি যা হওয়ার তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করার পরেই মেয়র নির্বাচনে হেরে গিয়েছে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস।
মালদ্বীপের রাজধানী মালে শহরে মেয়র নির্বাচনে মুইজ্জুর দল পরাজিত হয়েছে। সেখানে মেয়র নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন এমডিপি’র (মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টি) প্রার্থী অ্যাডাম আজিম। অ্যাডাম পেয়েছেন ৫৩০৩টি ভোট। অন্যদিকে মুইজ্জুর দলের প্রার্থী আজিমা শাকুর পেয়েছেন ৩৩০১টি ভোট। মেয়র নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর দল দীর্ঘদিন ধরেই ভারতপন্থী বলে পরিচিত। আর চিনপন্থী মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু ও তাঁর দলের একাধিক সদস্য সম্প্রতি যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করেছেন, মোদি সম্পর্কে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই তার ফল হাতেনাতে মিলল।
গত বছরের শেষে নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মুইজ্জু। এর আগে মালে শহরের মেয়র ছিলেন তিনি। তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়ার কারণে দায়িত্ব ছাড়ায় নতুন করে মেয়র পদের জন্য নির্বাচন হয়। আর সেই নির্বাচনেই ভরাডুবি হয়েছে মুইজ্জুর দলের।
ঘটনা হল কিছুদিন আগেই লাক্ষাদ্বীপ সফর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর লাক্ষাদ্বীপে মোদির বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি গোটা বিশ্বের নজর কাড়ে। মালদ্বীপের সঙ্গে লাক্ষাদ্বীপের সৌন্দর্যের তুলনায় টানতে শুরু করেন নেটিজেনরা। আর তাতেই ঘুম উড়ে যায় মালদ্বীপের। সদ্য গঠিত মুইজ্জু সরকারের তিন মন্ত্রী আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে মোদির সমালোচনা করেন। এরপরই প্রতিবাদে সরব হয় ভারত। উল্লেখ্য মালদ্বীপের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে সেখানকার পর্যটন ব্যবসার উপর। আর মালদ্বীপে পর্যটকদের বড় অংশ যান ভারত থেকে। স্বাভাবিকভাবেই মালদ্বীপের তিন মন্ত্রীর এমন আচরণ মানতে পারেনি ভারত। মালদ্বীপ যাওয়া বয়কট করুন, এই ডাক তখন দেওয়া হয় সব মহল থেকে। শচীন তেন্ডুলকর, অক্ষয় কুমার-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দেন। তার ফল মেলে হাতে নাতে। হাজার হাজার ভারতীয় পর্যটক মালদ্বীপের বিমান ও হোটেল বুকিং বাতিল করে দেন। তাতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে মালদ্বীপ প্রশাসন।
এর ফলে মালদ্বীপ জুড়েও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মুইজ্জু সরকারের মন্ত্রীদের এমন আচরণের বিরোধিতা করেন সে দেশের বহু মানুষ ও প্রধান বিরোধী দল এমডিপি। উল্লেখ্য মুইজ্জু মালদ্বীপে নির্বাচনের আগে ধারাবাহিকভাবে ভারতের বিরোধিতা করে প্রচার করেছিলেন। তাই মোদির বিরোধিতার পর মুইজ্জুর ইস্তফা দাবি করেন সেখানকার প্রধান বিরোধী দল এমডিপির প্রধান ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতপন্থী বলে পরিচিত। এর আগে তিনি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তখন চাপে পড়ে ওই তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন মুইজ্জুকে। কিন্তু তাতেও মুইজ্জুর দলের অস্বস্তি কাটেনি। দেশের একটা বড় অংশ পর্যটন ব্যবসা ও আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে মুইজ্জুর বিরোধিতা করতে থাকে। এই আবহের মধ্যে মালে শহরের মেয়র নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেল মুইজ্জুর দল।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাঁদের ধারণা এভাবেই মুইজ্জুর দল ধীরে ধীরে দুর্বল হবে। কারণ বহুদিন ধরেই মালদ্বীপে বহু উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে ভারত। বহু ক্ষেত্রে ভারতের দিকে তাকিয়ে তারা। কিন্তু ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে মুইজ্জুর দলের মন্ত্রীরা নয়াদিল্লিকে যেভাবে নিশানা করছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করছেন তাতে ক্ষতি হবে তাঁদেরই। ইতিমধ্যেই ভারতের বহু পর্যটক মালদ্বীপ যাত্রা বয়কট করায় চাপে পড়ে গিয়েছে দেশটি। বাধ্য হয়ে এখন তারা চিনের শরণাপন্ন হয়ে বলছে সেখান থেকে যেন বেশি করে পর্যটক পাঠানো হয় মালদ্বীপে। তাই এটা পরিষ্কার নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করতে গিয়ে মালদ্বীপ নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মেরেছে। যত দিন যাবে সেটা আরও ভাল করে বুঝতে পারবে তারা।