কলকাতা: নিয়োগের দাবিতে মধ্যরাত পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে এবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ চাকরিপ্রার্থীদের মঞ্চে নিজে হাজির থেকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন সুজন৷ সরকারি নিয়োগ সংস্থার অপদার্থতায় চাকরিপ্রার্থীদের জীবন থেকে বেশ কয়েকটি বছর কেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তা দায় নেমে কে?’’ অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের দাবিও জানানো হয়৷
এদিন চিঠিতে সুজনবাবু লেখেন, ‘‘এটা গভীর পরিতাপের যে, রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ টালবাহানা চলছে৷ চাকরি-প্রার্থী শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে বার বার৷ ২০১৫ সালে ১৬ আগস্ট আপার প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ এক বছর পর ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ফল প্রকাশ করে৷ আরও দু’বছর পর ২০১৮ সালে চাকরি-প্রার্থীদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু, তাঁদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি৷ গত ২১ জানুয়ারি, ২০১৯ এসএসসির চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমে জানান, ২৯ জানুয়ারি ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন শুরু হবে৷ কিন্তু, তা শুরু হয়নি৷ চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষুব্ধ৷ বস্তুত, তাঁদের চাকরি জীবনে বেশ কয়েকটি বছর কেড়ে নেওয়া হল, সরকারি নিয়োগ সংস্থার অপদার্থতায়৷ অথচ তাঁদের অন্দোলনের প্রতি সহানুভূতির পরিবর্তে পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে হয়রানি ও নির্মম আক্রমণ চলানো হচ্ছে৷ সঙ্গত কারণেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিধাননগরে আচার্য সদনের সামনে তাঁরা আন্দোলনে বসেন৷ তাঁরা এসএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন৷ আমি আন্দোলনরত যুবকদের সঙ্গে দেখা করি৷ ওরা সত্যিই যন্ত্রণার মধ্যে আছে৷ রাজ্যের স্কুলগুলিতেও শিক্ষক গুরুতর অভাব রয়েছে৷ পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পরও কেবল মাত্র ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য তিন বছর সময় ব্যয় করার কোনও যুক্তি সংগত ব্যাখ্যা থাকতে পারে না৷ ওরা পরীক্ষা দিয়েছে৷ পাশ করেছে৷ ভেরিফিকেশনের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে৷ অথচ তাঁর জন্য ইতিমধ্যেই এত দিন সময় অতিবাহিত হল কেন? কী রহস্য? এটা কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়৷ ওদের দাবি অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত৷’’
প্রতিশ্রুতি নয়, হাতে হাতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতভর অবস্থান বিক্ষোভে বসেন উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ বৃহস্পতিবার ১২টা থেকে শুরু হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান বিক্ষোভ চলে মধ্যরাত পর্যন্ত৷ পরে, পুলিশ গিয়ে চাররিপ্রার্থীদের বাসে তুলে থানায় নিয়ে যায়৷ যদিও, এদিন সন্ধ্যা থেকে চাকরিপ্রার্থীদের তুলে দেওয়া জন্য পুলিশের তরফে গ্রেপ্তারির ভয় দেখানো হলেও নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন আপার প্রার্থীরা৷ যতক্ষণ না পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে বলেও জানানো হয় চাকরিপ্রার্থীদের তরফে৷ এদিনের এই আন্দোলনের জেরে কমিশনের চেয়ারম্যানকে পেছনের দরজা দিয়ে অফিসে ঢুকতে হয় বলেও জানা গিয়েছে৷
বৃহস্পতিবার উচ্চ প্রথমিকে নিয়োগের দাবিতে আচার্য সদনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ আচার্য সদন থেকে বিকাশ ভবনে ডেপুটেশনও জমা দেওয়া হয়৷ ডেপুটেশন কর্মসূচিতে চেয়্যারম্যান চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বস্থ করে জানান, আপার প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ভেরিফিকেশনের কাজ শুরু হবে৷ ১৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যে নোটিফিকেশন জারি হবে৷ কিন্তু কমিশনের এই প্রতিশ্রুতি মানতে নারাজ চাকরিপ্রার্থীরা৷ তাঁদের দাবি, বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের অবস্থান চালিয়ে যাবেন৷ এদিন উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি ও শূন্যপদের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে রাতভর বিক্ষোভে বসার ডাক দেওয়া হয়েছে এসএসসি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের তরফে৷ সংগঠনের হুঁশিয়ারি, যতক্ষণ না পর্যন্ত কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যত তাঁদের এই কর্মসূচি চলবে বলেও জানানো হয়৷
আরও পড়ুন: বাংলায় ১ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করবে রিলায়েন্স: মুকেশ আম্বানি
সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক করে SSC-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘‘উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ১৩০৮০ জন নিয়োগ হবে জানুয়ারি শেষ অথবা ফেব্রুয়ারি প্রথমে৷’’ কিন্তু, কমিশনের বিবৃতি অনুযায়ী শূন্যপদের সংখ্যা নিয়ে চাকরি-প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ অবিলম্বে শূন্যপদ বৃদ্ধি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দাবিতে এদিন পথে নামেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷
কিন্তু, কেন এই দাবি? উচ্চ প্রাথমিকে কমপক্ষে ৩০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের দাবি তুলেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, এই মুহূর্তে কমিশন ১৩০৮০ জনের নিয়োগের কথা ভাবছে৷ ফলে, এত কম সংখ্যক শূন্যপদে নিয়োগের ঘোষণা হতেই চাকরিপ্রার্থী মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে৷ অবিলম্বে শূন্যপদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দাবিও জানানো হয়েছে৷
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে ১০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবে কোকা কোলা: অর্থমন্ত্রী
উচ্চ প্রাথমিকে ২০১৪ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৪০৮৮টি শূন্যপদ ছিল৷ সেই শূন্যপদ বেড়ে ১৮ হাজার হতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ সঙ্গে আরও সাত হাজার শূন্যপদ যুক্ত হয়ে কমপক্ষে ২৫ হাজার আসানে নিয়োগ হবে বলে আশা করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, কমিশনের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে ১৩০৮০ জনের নিয়োগের কথা ঘোষণা হতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে৷ কেননা, এর আগেও একাধিকবার উচ্চ প্রাথমিকে ৩০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়িয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, বাস্তবে সেই দাবি আদৌ মেনে নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ ভোটের আগে নিয়োগ শেষ করার দাবি জানিয়ে এদিন জোড়া কর্মসূচি পালনে মাঠে নামেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷