আজ বিকেল: শূন্যপদ সমস্যা না মিটলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ওয়েটিংদের নিয়োগের হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ ১৬০টি শূন্যপদের সমস্যা মিটলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে মঙ্গলবার চাকরি-প্রার্থীদের আশ্বাস দিলেন কমিশনের কর্তারা৷ ওয়েটিং প্রার্থীদের এখনও ‘ওয়েট’ করতে হবে বলেই কমিশন কর্তাদের দাবি৷ কিন্তু, নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগে শূন্যপদ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কেন কাউন্সেলিংয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি? কমিশনের জবাবে চাকরি-প্রার্থী মহলে চূড়ান্ত ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷
আজ, মঙ্গলবার কমিশনের দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি নেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ওয়েটিংদের তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী৷ চাকরি-প্রার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়৷ কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে চাকরি-প্রার্থীরা জানান, ‘‘আমাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান আধঘণ্টা কথা বলেছেন৷ শূন্যপদ সংক্রান্ত সমস্যা না মিটলে কবে ডাকা হবে তা জানতে পারেনি কমিশন৷ বিকাশ ভবন থেকে ১৬০টি শূন্যপদ সমস্যা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এখনই দিনক্ষণ জানতে পারবে না কমিশন৷’’ শূন্যপদ সমস্যার সঙ্গে নিয়োগের কী সমস্যা? জবাবে কমিশনের তরফে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়৷ ‘খেতে না দিয়ে বিয়ে বাড়িতে আমন্ত্রণ’ করার উদাহরণ টেনে আনা হয়৷ এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চাকরি-প্রার্থীদের একাংশ৷ নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগে শূন্যপদ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কেন কাউন্সেলিংয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি? এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে কমিশনের জবাব, ‘তোমাদের কী সমস্যা আছে সেটা বলো৷’ দাবি না মিটলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে কমিশনের জবাব, ‘‘তোমরা শিক্ষক হতে এসেছো৷ তোমার যদি আন্দোলন করো, তা করো৷ আমরা কী বলব৷’’ চাকরি-প্রার্থীদের এদিন সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘‘তোমরা ওয়েটিং, তোমাদের ওয়েট করতেই হবে৷ ’’
অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরু দিনেই কমিশনের দপ্তরে হাজির হন বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী৷ কিন্তু, কমিশনের তরফে এই মন্তব্য শুনে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিরে যান চারকিপ্রার্থীরা৷ তবে, আগামী দিনে নিয়োগের দাবিতে বড়সড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও চাকরি-প্রার্থীদের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে৷
চাকরি-প্রার্থীদের অভিযোগ, এসএসসির মাধ্যমে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর৷ প্যানেল প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় একবছর পর ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর৷ মোট ৫৭১১ শূন্যপদও প্রকাশ করা হয়৷ প্রথম ও দ্বিতীয় দফার কাউন্সেলিং পাঁচ মাসেরও বেশি সময় আগে শেষ হলেও অবশিষ্ট শূন্যপদে তৃতীয় দফার কাউন্সেলিং কমিশন এখনও শুরু করেনি৷ প্রথম দফার কাউন্সেলিং হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩৭৭০ জন জন প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়৷ অবশিষ্ট শূন্যপদে দ্বিতীয় দফার কাউন্সেলিং হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৮ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত চলে৷ দ্বিতীয় দফায় মোট ১১০৮ জন প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। দুই দফা মিলিয়ে মোট ৪৮৭৮ জনকে নিয়োগ পত্র দেওয়া হলেও এখনও ৮৩৩ জনের নিয়োগপত্র তো দূরের কথা, কাউন্সেলিং পর্যন্ত করেনি কমিশন৷ এছাড়াও কিছু নন জয়নিং সিট রয়েছে৷
চারকিপ্রার্থীদের ধারনা, সব মিলিয়ে হাজারেরও বেশি সংখ্যক চাকুরিপ্রার্থীর নিয়োগ এখনও বাকি রয়েছে৷ কমিশনের গ্যাজেটে আপ টু ডেট ভ্যাকেন্সিতে নিয়োগ ও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত অনুযায়ী নিয়োগের কথা বলা আছে৷ কমিশন এই দুটি নিয়ম মানছে না বলে চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ৷ এই প্রসঙ্গে এসএসসি ছাত্র যুব অধিকার মঞ্চের এক সদস্য তুহিন শুভ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বারবার কমিশনে গিয়েছি৷ কিন্তু, কমিশনের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি৷ এমত অবস্থায় আমরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারিতে ফের কমিশনে যাচ্ছি, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ওয়েটিংদের দ্রুত নিয়োগ ও আপ টু ডেট ভ্যাকেন্সিতে নিয়োগের দাবিতে। এর পরেও যদি না আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয় তাহলে আমরা চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হব৷’’ একদিকে স্কুলগুলিতে যখন শিক্ষক শিক্ষিকার অভাবে পঠন পাঠন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তখন নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের উদাসীনতা অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক।
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘শিক্ষা দপ্তরের খামখেয়ালিপনা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের ফল ভোগ করতে হচ্ছে উচ্চশিক্ষিত বেকারদের, যারা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এম্পানেলড হয়ে আছে। বছরের পর বছর এই জিনিস চলতে পারে না। অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে তাঁদের এই আন্দোলনকে আমরা সর্বতোভাবে সমর্থন করি ও আমরা আন্তরিকভাবে তাদের পাশে রয়েছি৷’’
মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতির পক্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না। এতদিন পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও প্রত্যেকটি স্তরেই নানান অনিয়ম ও অভিযোগ দেখা যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর নবম-দশম শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু গত বছরের জুলাই ও আগস্টে একাদশ-দ্বাদশ এর প্রথম ও দ্বিতীয় কাউন্সেলিং হলেও আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা গেল থার্ড কাউন্সেলিং না হয়েই নবম দশম শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু যায়। ফলে চরম অসহায়তার মধ্যে পড়েছেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির এম্প্যালেন্ড ও ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরেই STEA এর সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র এসএসসি দপ্তরে কথা বলেন৷ চেয়ারম্যান যথারীতি মৌখিক আশ্বাসই দিয়েছিলেন৷ তাই ১২ তারিখে চাকরিপ্রার্থীদের যে শান্তিপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ অবস্থান-ডেপুটেশন হচ্ছে তাকে আমরা সর্বতোভাবে সমর্থন করি৷’’