‘TET উত্তীর্ণ শংসাপত্র নিয়ে কী হবে? চাকরিই যখন দিচ্ছে না সরকার’

আজ বিকেল: টেট উত্তীর্ণদের শংসাপত্রের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ উচ্চ আদালতের রায়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার চাকরিপ্রার্থী সুবিধা পেলেও রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন এই ক্ষোভ? শংসাপত্রের পাওয়ার নির্দেশের পরও কেন অখুশি চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ? সোমবার আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য ও রাজ্যের তরফে সওয়াল-জবাব শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের ১১ এজলাসে

‘TET উত্তীর্ণ শংসাপত্র নিয়ে কী হবে? চাকরিই যখন দিচ্ছে না সরকার’

আজ বিকেল: টেট উত্তীর্ণদের শংসাপত্রের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ উচ্চ আদালতের রায়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার চাকরিপ্রার্থী সুবিধা পেলেও রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন এই ক্ষোভ? শংসাপত্রের পাওয়ার নির্দেশের পরও কেন অখুশি চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ?

সোমবার আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য ও রাজ্যের তরফে সওয়াল-জবাব শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের ১১ এজলাসে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় পর্ষদকে সাফ জানিয়ে দেন, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ২ মাসের মধ্যে টেট উত্তীর্ণ সমস্ত সফল চাকরিপ্রার্থীকে সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য থাকবে পর্ষদ৷ হাইকোর্ট জানিয়েছে, টেট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা শিক্ষক নিয়োগের ডাক পাবেন৷ সফলদের ডাকা হবে ইন্টারভিউতে৷ টেট পাসের শংসাপত্রের মেয়াদ হবে ২ বছর৷ নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়৷

কিন্তু, এনসিটিইর নিয়ম অনুযায়ী টেট পাশ প্রার্থীদের যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, তার সর্বাধিক ৭ বছর পর্যন্ত বৈধতা থাকে৷ তবে এই বৈধতা নির্ধারণ নির্ভর করে রাজ্য সরকারের উপর৷ এদিন সফল প্রার্থীদের দু’বছরের জন্য শংসাপত্রের দেওয়ার নির্দেশ ঘিরে রাজ্যের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে৷ কিন্তু, কেন এই অসন্তোষ?

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, এমনিতেই ‘১৮ মাসে বছর’ কমিশনের! তার উপর শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অন্তত হাজার দু’য়েক মামলা জমে রয়েছে হাইকোর্টে৷ সরকারি উদাসীনতায় থমকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ হালে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হলেও উঠেছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ৷ রয়েছে শূন্যপদ সংক্রান্ত একাধিক জটিলতা৷ এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে চাকরি তো দূর, গত ৯ অক্টোবর ২০১৫ প্রাইমারি টেট পরীক্ষা দেওয়ার পর ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে সফল হওয়ার পরও এতদিনে মেলেনি শংসাপত্র৷ তারপর উপর ২০১৭ সালে নতুন করে টেটের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও পরীক্ষার দিনক্ষণ ও শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় দেড় বছর পরও জানতে পারেনি পর্ষদ৷ ফলে, এহেন ধীরে চলা পর্ষদের দু’বছরের শংসাপত্র পেয়ে আদৌও চাকরি জুটবে তো? প্রশ্ন তুলছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷

কেননা, ২০১৬ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় টেট উত্তীর্ণদের শংসাপত্রের দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ৷ এনিয়ে কয়েক হাজার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে৷ চাকরিপ্রার্থীদের বারংবার প্রাথমিক শিক্ষক সংসদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে গেলেও তিনি বিষয়ে এড়িয়ে যান৷ কেউ যদি টেট পাশ করেও চাকরি না পান, তাঁদের জন্য টেট উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ পরবর্তী বছরগুলিতে ওই শংসাপত্র দেখিয়ে চাকরির সুযোগ থাকে৷ কিন্তু, পর্ষদের তরফে সেই শংসাপত্র দিতে অনীহা প্রকাশ করতে থাকে৷

২০১৬ সালে টেটে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন৷ চাকরি পেয়েছেন ৪২ হাজার৷ প্রায় ৮০ হাজারের মতো প্রার্থীর এই শংসাপত্র পাওয়া উচিত ছিল৷ আগামী দিনে যদি পর্ষদ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরা যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে নেন, তাহলে এই শংসাপত্র দেখিয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন৷ বসতে হবে না কোন টেট পরীক্ষায়৷ কিন্তু, নানান কারণ দেখিয়ে শংসাপত্র দেওয়া থেকে বিরত থাকে পর্ষদ৷

গতবছর স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেট পাসের শংসাপত্রের মেদায় বাড়িয়ে দেয়৷ টেট-২০১১ পরীক্ষা অনুযায়ী যে সব সফল পরীক্ষার্থীরা টেট উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন, তাঁদের সার্টিফিকেটের মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ, ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত৷ প্রার্থীদের টেট সার্টিফিকেটের বৈধতা না বাড়ানো হলে কয়েক লাখ প্রার্থী টেট পাশ করেও চাকরিতে আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হতেন৷ কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, আপার প্রাইমারি লেভেল, প্রথম এসএলএসটি ২০১৬ অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার পদে যতক্ষণ না নিয়োগ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত টেট-২০১১-র সফল প্রার্থীদের সার্টিফিকেটের বৈধতা বজায় থাকবে৷ আপার প্রাইমারি লেভেলের প্রথম এসএলএসটি ২০১৬-র ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য যাঁরা টেট পাশ করেছেন, সেইসব সফল প্রার্থীদের একাংশ সার্টিফিকেট পাননি বলেও অভিযোগ ওঠে৷ পরে সফল প্রার্থীদের রিজিয়নাল অফিস থেকে সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷ অপার প্রাইমারি লেভেলের ১ম পরীক্ষায় মোট আবেদনকারী ছিল ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৬০৷ যার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজার ২৮০ এবং প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ০৮ হাজার ৩৮০৷

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ‘‘এত কষ্ট করে দিন-রাত পরিশ্রম করে পরাশোনার পর সফল হয়েও কী লাভ৷ সফল হওয়ার পর শংসাপত্র পেতে যখন আদালতে ছুটতে হয়, তখন চাকরি পেতে আরও কত কী না করতে হবে, কে জানে৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 16 =