কলকাতা: ছিল ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা৷ ছিল কৃষ্ণনগরে জেলাশাসকের দপ্তরে ভোটকর্মীদের বিক্ষোভ৷ কিন্তু, বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই খোঁজ মিলল নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়কে৷ হওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ গত এক সপ্তাহ কোথায়, কীভাবে ছিলেন, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠছে৷ সন্দেহের নজর অর্ণবের শ্বশুরবাড়ির সদস্যের উপরেও৷
তবে, সাতসকালে সুখবরটা পেতেই কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ভোটকর্মীদের একাংশ৷ অর্ণব রায়ের সন্ধান পাওয়ার খবর পেতেই নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ৷ এদিন কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনকে। কৃষ্ণনগরে আজ বিরাট প্রতিবাদ মিছিল এবং জেলাশাসকের দপ্তরে ডেপুটেশন ছিল। প্রশাসনের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল। তার মধ্যে অর্ণব রায়ের সন্ধান পাওয়াটা আন্দোলনের জয়। যে কোন দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আন্দোলনই যে একমাত্র পথ তা আরও একবার প্রমাণিত হল।’’ তবে, অর্ণব ফিরে আসায় বাতিল হবে কর্মসূচি? কিংকরবাবু বলেন, ‘‘আজ আমরা জেলা শাসকের কাছে যাচ্ছি৷ ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা বিষয়টি আমরা তুলে ধরব৷’’
গত ১৮ এপ্রিল থেকে নদীয়ার নোডাল অফিসার ও নির্বাচন কমিশনে দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অর্ণব রায়ের অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচনের দাবিতে কৃষ্ণনগর জেলাশাসক দপ্তর অভিযানের ডাক দেয় শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ৷ মঞ্চের সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র আগেই বলেন, “যে নির্বাচন কমিশন তার আধিকারিকদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা সাধারণ ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা দেবে কিভাবে? আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি, এর মধ্যে অর্ণব রায়কে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি। না হলে আগামী ২৫ এপ্রিল নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জেলা শাসক দপ্তরে সারা বাংলায় শিক্ষক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা বিক্ষোভ অভিযান করব। কৃষ্ণনগরের টাউনহলে আমরা জমায়েত হব বেলা ১ টায়। সেখান থেকে জেলাশাসকের উদ্দেশ্যে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হবে।” এই হুমকির পরই আজ হওড়া থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়৷
প্রায় এক সপ্তাহ পর অবশেষে উদ্ধার নিখোঁজ নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়ের খোঁজ পেল সিআইডি৷ হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ আপাতত তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে বিশ্রামের জন্য রাখা হয়েছে৷ পরে, তাঁকে জেরা করা হবে৷
গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে নদীয়া জেলায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অর্ণব রায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। জেলার ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কর্মসূত্রে জেলার ১০০ দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসার তিনি।
নিখোঁজ অর্ণবের সন্ধানে তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশ৷ তদন্ত করে সিআইডিও৷ রাজীব কুমার নিজেই এই তদন্তপক্রিয়ায় হাত লাগিয়েছিলেন৷ তাঁর দু’টি মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকলেও পরে শেষ একবার খোলা হয় ফোন৷ সেখানে টাওয়ার লোকেশন অনুসরণ করে সিআইডি আজ তাঁকে হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়৷
সিআইডি সূত্রে খবর, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকেই তিনি হাওড়ার তাঁতাইতলায় ছিলেন৷ শিবপুরের শ্বশুরবাড়িতেই তিনি ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে৷ কিন্তু, নিজের বাড়িতে স্বামীকে রেখে হঠাৎ কী কারণে তিনি স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অনীশ যশ? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷ অর্ণবকে অপহরণ করা হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ জানা গিয়েছে, তাঁকে আপাতত বিশ্রাম দেওয়ার পর জেরার প্রক্রিয়া শুরু করবে সিআইডি ও জেলা প্রশাসন৷ গত সাতদিন তিনি কোথায়, কিভাবে কেন নিজেকে আত্মগোপন রেখেছিলেন, তাও জানান কাজ শুরু হয়েছে৷ অর্ণবের স্ত্রী ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জেরা করা হবে বলেও খবর৷
রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে WBCS অফিসার অনীশা যশ আগেই জানিয়েছিলেন, ‘‘সবার সহযোগিতা পাচ্ছি ঠিকই? কিন্তু, পুলিশকেও আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত৷ এতদিন ধরে পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরছি৷ অথচ, কেউ কিছুই বলতে পারছেন না৷ কোথায় গেলে, কীভাবে পাব আমার স্বামীর খোঁজ৷’’ এর আগে কমিশনের তরফে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখানো হলেও তাঁর সাফ জবাব দেন, ‘‘উনি আমার স্বামী৷ সেদিন ওর সঙ্গে ছ’বার কথা হয়েছিল৷ কিন্তু, হঠাৎ যে কী হল…৷’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি করজোড়ে প্রার্থনা করছি, সবাই মিলে চেষ্টা করুন, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷ ওর বাবা-মায়ের এক ছেলে৷ ওঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে৷ ওঁদের কাছে অর্ণবকে ফিরেয়ে দিন প্লিজ৷ কেউ আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷’’
কিন্তু অভিযোগ উঠছে, অর্ণববাবু যদি নিখোঁজ হওয়ার পর হাওড়ার শিবপুরে থেকে থাকেন, তাহলে কেন তদন্তের গতিপ্রকৃতি অন্যপথে চালানোর চেষ্টা করলেন WBCS অফিসার অনীশা যশ? ভোটের ডিউটি এড়ানোর জন্য এই পরিকল্পনা, নাকি এই ঘটনার পেছনে অন্যকোনও রহস্য? তা জানতে মাঠে নেমছে সিআইডি৷