নয়াদিল্লি: বুলেটের পিছনে লাগানো ছোট্ট একটা স্টল৷ পরিষ্কার-ঝকঝকে৷ চমৎকার ভাবে সাজানো৷ স্টলের নীচে লাগানো রয়েছে চারটে চাকা৷ বুলেটের সঙ্গে হুক দিয়ে জোড়া হয়েছে সেই স্টলকে৷ বুলেটের অ্যাক্সিলেটরে চাপ দিয়ে গড়গড় করে এগিয়ে চলে সেই দোকান৷ যার নাম ‘বিটেক পানিপুরীওয়ালী’! দিল্লির রাজপথে চলার সময় হঠাৎ করে মজাদার এই ফুচকার দোকান নজরে আসতে পারে আপনারও৷
আরও পড়ুন- অনুব্রত কন্যার ১৬ কোটির FD কালো টাকাতেই! জানতে পারল ইডি
গোটা বিষয়টাই বেশ অভিনবত্বে মোড়া৷ তবে চালকের আসনে যিনি রয়েছেন, তাঁর কথা শুনলে চমকে উঠতে হয় বৈকি৷ না, কোনও পুরুষ নয়৷ এই দোকানের মালিক এক তরুণী৷ নাম তাপসী উপাধ্যায়৷ বয়স মাত্র ২১৷ বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মিরাট৷ তবে তাঁর বর্তমান ঠিকানা দিল্লি৷ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিটেক করছেন৷ চলুন শোনা যাক তাঁর গল্প৷
এতক্ষণে অনেকেই হয়তো ভেবে নিয়েছেন, অভাবের তাড়নায় হয়তো এই পথ বেছে নিয়েছেন তাপসী৷ কিন্তু, বলে রাখি, তাপসীর পরিবার কিন্তু বেশ স্বচ্ছল৷ তাহলে কেন ফুচকা বিক্রি করছেন তৃতীয় বর্ষের এই বিটেক পড়ুয়া? আসলে তাপসী চেয়েছিলেন সাবলম্বী হতে৷ বন্ধুর বাইক আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছাকে পুঁজি করে নেমে পড়েন ময়দানে৷ শুরু হয় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই৷ তাঁর স্টলের ইউএসপি হল-এয়ার-ফ্রায়েড ফুচকা। অর্থাৎ, এই ফুচকা তেলে ভাজা হয়নি। তাই স্ট্রিট ফুড হওয়া সত্ত্বেও রীতিমতো স্বাস্থ্যকর। এতে ব্যবহার করা হয় মিনারেল ওয়াটার, গ্রিন চিলি এবং পিঙ্ক হিমালয়ান রক সল্ট।
বিটেকের পড়ুয়া৷ অনায়াসে চাকরির চেষ্টা করতেই পারতেন৷ তেমনটা না করে কেন ফুচকার স্টল দিলেন? পরিবার আপত্তি জানায়নি? তাপসী বলেন, ‘‘আমার বাড়ির লোক খুবই সাপোর্টিভ। তাঁদের যখন আমার পরিকল্পনা জানাই, তখন বলেছিলেন, তুমি যখন চিন্তাভাবনা করেছ, তখন নিশ্চয় সবদিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এমনটা নয় যে, আমাকে সংসার চালাতে হয়৷ বা অভাবের জন্য এই কাজ করতে হচ্ছে। বরং আমি নিজের জন্য উপার্জন করি। আমি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর থাকতে চাই এবং অন্যকেও সেই সুযোগ দিতে চাই।’’
সফরটা শুরু হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে৷ ১৫ তারিখ পশ্চিম দিল্লির তিলকনগর এলাকায় প্রথম বসেছিল ‘বিটেক পানিপুরিওয়ালী’র স্টল৷ দিল্লির তিলকনগর মেট্রো স্টেশনের অনতিদূরে শহিদ ভগৎ সিং মার্গের পাশেই রয়েছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা অফিস৷ ঠিক তার সামনেই শুরু হয় ‘বিটেক পানিপুরীওয়ালী’র বিকিকিনি। একটা থেকেই এখন পশ্চিম দিল্লিতে চার চারটে এয়ার-ফ্রায়েড ফুচকার স্টল সামলাচ্ছেন ২১-এর এই তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘আগামী দিনে স্টলের সংখ্যা আরও বাড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে। একটি বেস কিচেন তৈরি করেছি। সেখানেই ফুটকা তৈরি করে স্টলে নিয়ে আসি।’ প্রত্যেক স্টলের জন্য একজন কর্মীও নিয়োগ করেছেন তাপসী। তাঁর সাফ কথা, দেশের বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে নিজে চাকরি করার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন। ফুচকা বেচে মাত্র চার মাসেই লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করে ফেলেছেন তিনি। বিটেক পানিপুরীওয়ালীর সামনে লেগেই থাকে গ্রাহকের ভিড়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>