কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-যুবদের অধিকারের লড়াই লড়বে কে?

মেহেবুব মণ্ডল: দীর্ঘ পাঁচ বছর গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের মসনদে একটা তিব্র ফ্যাসিবাদী সরকার তার আধিপত্য চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদ দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা ক্রমশ এক কর্পোরেট ফ্যাসিবাদের চেহারা নিতে থাকে। বিকাশ বা আচ্ছে দিনের নাম করে দেশের মানুষের উপরে চাপিয়ে দিতে থাকে জন বিরোধী নীতি। এই সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বছরে

6632b084fbe0b7f437a2be6f1bd94f53

কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-যুবদের অধিকারের লড়াই লড়বে কে?

মেহেবুব মণ্ডল: দীর্ঘ পাঁচ বছর গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের মসনদে একটা তিব্র ফ্যাসিবাদী সরকার তার আধিপত্য চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদ দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা ক্রমশ এক কর্পোরেট ফ্যাসিবাদের চেহারা নিতে থাকে। বিকাশ বা আচ্ছে দিনের নাম করে দেশের মানুষের উপরে চাপিয়ে দিতে থাকে জন বিরোধী নীতি। এই সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বছরে দু’কোটি চাকরি দেবে, কিন্তু কার্যত মানুষকে করল কর্মহীন। পাশাপাশি বেসরকারিকরণের হিড়িক, শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু জিও ইউনিভার্সিটির মতো আদানি আম্বানিদের ভোগ্যপণ্যে পরিণত হল। নোটবন্দির মাধ্যমে কালোটাকা ফিরিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার যে মেকি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যতকে গাঢ় অন্ধকারে ঠেলেদিল। এনআরসি-র নাম করে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার যে চক্রান্ত তা শুধু ন্যক্কারজনকই নয় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে তৈরি হওয়া একটা বিশ্বাসঘাতকতা।

সেই বিজেপির পুনরায় ক্ষমতায় আসাটা অসম্ভব বলে মনে হলেও তা ঘটেছে। ফ্যাসিবাদের এটাও একটা ক্যারিশ্মা, কিন্তু প্রশ্ন হল কীভাবে? যখনই খাদ্য বস্ত্র কর্মসংস্থান নিয়ে প্রশ্ন করবে সীমান্তে বেজে উঠবে যুদ্ধের দামামা। দেশের মানুষের মগজ ধোলাই ফ্যাসিবাদের একটা রণকৌশল। মিডিয়া আইটিসেলও বিদ্বেষগুলোকে কাজে লাগিয়ে এ যাত্রায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ফ্যাসিবাদী সরকার আবারও গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের উপরে চেপে বসল।

যে পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষকে একদিন পথ দেখাতো আজ সেই পশ্চিমবঙ্গ পশ্চাদপদ মানসিকতাকে আঁকড়ে প্রগতিহীন রাজনৈতিক পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু কেন? দীর্ঘ ৩৪ বছরের পর পশ্চিমবঙ্গে যে পালাবদল ঘটেছিল তার প্রধান কারণ ছিল সিপিআইএম-এর  নেতৃত্বে বামপন্থার বিপর্যয়।  সেদিন সিপিআইএম-এর বিকল্প হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বাম গণতান্ত্রিক মানুষ কিন্তু সেদিন তৃণমূলকে বেছে নেয়নি, নিয়েছিল পরিত্রাণের স্বার্থে। কিন্তু হল আরও বিপরীত,  তৃণমূল নেতাদের অহেতুক দাদাগিরি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, চিটফান্ড, গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে নাকাল জনগণ। দুটো পঞ্চায়েত নির্বাচনে কখনও মশারি টাঙিয়ে কখনও রাস্তায় উন্নয়ন বাহিনী দাঁড় করিয়ে সমাজের শিক্ষিত শান্তিকামী জনতাকে অপদস্থ করেছে। তাইতো বিজেপির মতো হিংস্র দল বাঞ্ছিত নয় জেনেও অনেকেই  তৃণমূলকে তাড়াতে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। এই ভোটারদের বেশীরভাগই গণতান্ত্রিক জায়গা থেকেই প্রতিশোধ নিতে  বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। খাল কেটে কুমির আনার এই দায় তৃণমূলকে স্বীকার করতেই হবে।

পূর্বতন সরকারের প্রকল্প গুলোতে সবুজ রং মাখিয়ে তৃণমূল এক খয়রাতির রাজনীতিতে মেতে উঠল।  প্রতিশোধে ভোট গেলো পদ্মে, কিন্তু শিক্ষিতদের এখানে একটা বিবেচনার দায় ছিল। সেটা হল কর্মসংস্থানের প্রশ্ন পদ্মেও আছে।  শুধু বছরে দু’কোটি নয় বিজেপি শাসিত রাজ্যে এ রাজ্যের টেট কেলেঙ্কারির থেকেও সাংঘাতিক কেলেঙ্কারি আছে যা ব্যাপম নামে পরিচিত।

তৃণমূল আসার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ বিশেষ একটা সুর তুলেছিল, তৃণমূল মুসলিম তোষণ করছে, প্রসঙ্গত ইমামভাতা। মুসলিম সম্প্রদায়ের নিজস্ব একটা তহবিল আছে যে তহবিলের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। সারা বাংলায় এমন বহু জায়গা আছে যা ওয়াকফ সম্পত্তি এরমধ্যে রাইটার্স বিল্ডিং থেকে শুরু করে রাজভবনও পড়ে। এই টাকা সেখান থেকে এলেও মমতার সরাকার নাম কিনতে ইমামভাতা চালুর বরাত দিল। এই ইমাম ভাতার রহস্য না জেনে যারা মুসলিম বিদ্বেষ উগরে দিয়েছে তারা শুধু সাম্প্রদায়িক নয় সহনাগরিরকদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ পরায়ণ।  যদি তা না হতো বরং বলা দরকার ছিল ওয়াকফের টাকা থেকে মুসলিম সমাজের মানোন্নোয়ন করা হোক কারন সাচার ও মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের অবস্থা এসটি এসসিদের থেকেও খারাপ। এটা আসলে মুসলিম সম্প্রদায়দের নিয়ে ভোটবাজি রাজনীতি করিয়ে নেওয়া.. আর অন্যদের কাছে তাদের বিষিয়ে বিজেপিকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে তাদের এন আর সি বা গুজরাট দাঙ্গার পথে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত।

কিন্তু প্রশ্ন হল এই বাংলার বাম গণতান্ত্রিক মানুষ দাঁড়াবে কোথায়? কৃষক শ্রমিক ছাত্র যুবদের অধিকারের লড়াই লড়বে কে? এখন নতুন করে ভাবার সময় এসেছে, সংবিধান বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে, রুজি বাঁচাতে, সর্বোপরি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানবতার মশাল তুলে ধরতে কোন ছাতার তলায় আশ্রয় নেবে ধর্মনিরপেক্ষ শ্রমজীবী মানুষ?

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *