ইন্দিরা গান্ধী পেরেছিলেন, নাতি রাহুল কি পারবেন কামব্যাক করতে? মঞ্চ পুরো তৈরি

ইন্দিরা গান্ধী পেরেছিলেন, নাতি রাহুল কি পারবেন কামব্যাক করতে? মঞ্চ পুরো তৈরি

 

নিজস্ব প্রতিনিধি: হঠাৎই যেন হিরো হওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন সদ্য সাংসদ পদ হারানো রাহুল গান্ধী। যেভাবে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হয়েছে তা বিরোধীদের এক জায়গায় নিয়ে এসেছে। কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব রাখা রাজনৈতিক দলগুলিও আজ এক জায়গায় গিয়ে মিশেছে। এই অবস্থায় এখন একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে, রাহুল কি কামব্যাক করতে পারবেন? সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ বিজেপিও মনে করে রাহুলের পক্ষে সহানুভূতির হওয়া বইতে পারে। সেই অনুযায়ী ঘুঁটি সাজাচ্ছে গেরুয়া শিবির। আর ঠিক তখনই রাজনৈতিক মহল ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে রাহুলের তুলনা করে পুরনো প্রসঙ্গ নতুন করে তুলে ধরেছেন।

 

১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে সরকারি অর্থ ব্যবহার এবং কারচুপি করে ইন্দিরা জয় পেয়েছিলেন অভিযোগে মামলা হয়। সেই মামলার রায় বের হয় ছয় বছর পরে। তাতে ইন্দিরা গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়। তবে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তিনি তাতে জয় পান। এখানেই শেষ হয়, ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে রায়বেরিলি কেন্দ্রে পরাজিত হন ইন্দিরা। এরপর ক্ষমতায় আসে মোরারজি দেশাই সরকার। সেই সরকারের হাতে একদিনের জন্য হলেও ইন্দিরাকে জেলবন্দি হতে হয়। কিন্তু ‘এশিয়ার মুক্তিসূর্য’ ইন্দিরার কাছে এগুলি কোনও সমস্যাই হয়নি। তিনি তখন সাংসদ পর্যন্ত নন, এটাও বিচলিত করেনি তাঁকে।

 

ঠিক সেই সময় কর্ণাটকের চিকমাগালুর লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হন ইন্দিরা। বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে দেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে। এভাবেই ইন্দিরার কামব্যাকের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার কিছুদিন পরেই বিহারের বেলচি গ্রামে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের বহু মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। সেই গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইন্দিরা। তখনও পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী তো দূরের কথা, প্রশাসনেরও কেউ সেই গ্রামে পৌঁছতে পারেননি। বর্ষার জলকাদায় গ্রামের রাস্তা এতটাই দুর্গম হয়ে পড়েছিল সেখানে যাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকী হেলিকপ্টারেও যাওয়ার উপায় ছিল না। তখন ইন্দিরা বেশ কিছুটা রাস্তা গাড়িতে গিয়ে তারপর গাড়ি থেকে নেমে হাতির পিঠে চড়ে কাদা পেরিয়ে সেই গ্রামে পৌঁছে যান।

 

দেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হাতির পিঠে চড়ে যাচ্ছেন, এই দৃশ্য দেখে গোটা ভারতবর্ষ মোহিত হয়ে যায়। এরপর ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাড়ে তিনশোর বেশি আসনে জিতে বিপুল ভাবে ক্ষমতায় আসেন ইন্দিরা। ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে ঠাকুরমার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাহুল কী পারবেন এভাবে কামব্যাক করতে? ঘটনাচক্রে কর্ণাটকের একটি সভাতেই মোদি পদবি নিয়ে বিতর্কিত কথা বলার জন্যই রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়েছে এবং তাঁকে দু’বছরের জেলের সাজা শুনিয়েছে গুজরাটের সুরাটের জেলা আদালত।

 

অর্থাৎ এখানেও রাহুল এবং ইন্দিরার মধ্যে কর্ণাটক কানেকশন দেখা যাচ্ছে। কারণ কর্ণাটকের চিকমাগালুর লোকসভার উপনির্বাচনে জিতেই ফের সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন ইন্দিরা। এই পরিস্থিতিতে মাস দুয়েকের মধ্যেই কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচন হবে। সেখানে প্রচারে রাহুল ঝড় তুলতে পারেন কিনা, ব্যাট চালিয়ে খেলতে পারেন কিনা, নিঃসন্দেহে সেদিকেই সবার নজর থাকবে। কিছুদিন আগেও কংগ্রেসের সঙ্গে যে সমস্ত দল দূরত্ব বজায় রেখেছিল তারাও আজ রাহুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। রাহুলের পক্ষে সহানুভূতির হওয়া রয়েছে, এটা বিজেপিও ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিচ্ছে। এটা স্পষ্ট রাহুলের পক্ষে সহানুভূতির হওয়া রয়েছে। অর্থাৎ মঞ্চ একপ্রকার সাজানো রয়েছে রাহুলের জন্য। তাই একটাই প্রশ্ন, তিনি কি সেটার সদ্ব্যবহার করতে পারবেন? তারই উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + 9 =