কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষকদের পর এবার বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে রাজপথে নামছেন টিডিটি বা গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের একাংশ৷ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অধিকার ছিনিয়ে আনার কর্মসূচি শিক্ষকদের৷
শুধু বেতন বৃদ্ধির দাবিই নয়, পে-কমিশন চালু থেকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া, বদলি, শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছ, প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল ফেরানো-সহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ১০ জুলাই সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত মিছিল ও অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন কর্মসূচি গ্রহণ করছে মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতির৷
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘আগামী ১০ জুলাই সমিতির বিভিন্ন জেলা থেকে সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আসছেন৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছি পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সর্বস্তরের শিক্ষক শিক্ষা কর্মীরা চূড়ান্তভাবে অবহেলিত ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চনার শিকার৷ অস্বীকার করার উপায় নেই, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার মান, প্রশাসনিক অবস্থা-সহ বিভিন্ন কারণে ক্রমাগত নিচের দিকে নামছে৷ ইতিমধ্যেই আমরা আমাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বহু বার গিয়েছি৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি৷ ফলে, পরিস্থিতিতে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আগামী ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা আমাদের দাবিগুলি তুলে ধরব৷ প্রয়োজনে আরও তীব্রতর আন্দোলন গড়ে তুলব৷’’
সংগঠনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ‘‘গত সাড়ে তিন বছর ধরে পে কমিশনের কাল হরণ করে শিক্ষক-শিক্ষক সহ সমস্ত স্তরের সরকারি-আধা সরকারি কর্মচারীদের চূড়ান্ত আর্থিক বঞ্চনার মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে৷ ফলে আমাদের দাবি অবিলম্বে পে কমিশন চালু করতে হবে৷ বকেয়া ডিএ প্রদান করতে হবে৷ প্রথম শ্রেণি থেকে অবশ্যই পাশ ফেল প্রথা চালু করতে হবে৷ অবিলম্বে মাদ্রাসা সহ সকল বিদ্যালয়ে শূন্যপদ সার্ভিস কমিশন মারফত পূরণ করতে হবে৷ অবিলম্বে আবেদনের ভিত্তিতে ট্রান্সফার চালু করতে হবে৷ ডিডিটি বা গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের ৯ হাজার থেকে ৪০ হাজার ৫০০ পে-ইন ব্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷ মাদ্রাসা-সহ সকল বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী ঝাড়ুদার নিয়োগ করতে হবে৷ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের নতুন বিদ্যালয় যুক্ত হওয়ার সময় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷ শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের স্বাস্থ্য সাথীর বদলে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবীমা চালু করতে হবে৷’’
এই দাবিগুলি পূরণ না হলে শিক্ষক শিক্ষা কর্মীদের পক্ষ থেকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে তথা দেশে অনেক এমএলএ, এমপি ও মন্ত্রী আগে ছিল, এখনও আছে৷ আর পরেও থাকবেন৷ কিন্তু মানুষের দাবি আদায় করতে হবে পথে নেমে, আন্দোলন করে৷ আমাদের রাজ্যে এর জ্বলন্ত উদাহরণ, সাম্প্রতিক জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন, ভোট কর্মীদের নিরাপত্তার আন্দোলন ও এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন। তাই আমি সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের কাছে আবেদন, এই প্রতিবাদ আন্দোলনকে প্রতিরোধে পরিণত করে দাবি আদায় করে নিতে আসুন৷ একটি দিন আমাদের নিজেদের সিএল নিয়ে রাজপথ কাঁপিয়ে তুলি৷’’
ঠিক কী কী দাবি তুলে ধরা হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে? জানা গিয়েছে, অবিলম্বে পে কমিশন চালু সহ বকেয়া ডিএ প্রদান, শিক্ষার মানোন্নয়নে অবিলম্বে প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল ফেরানো, অবিলম্বে মাদ্রাসা সহ বিদ্যালয়গুলিতে সকল শূন্যপদ নিয়মিত সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পূরণ করা, আবেদনের ভিত্তিতে বদলির নোটিফিকেশন জারি করা, টিজিটি বা গ্রাজুয়েট টিচারদের ৯০০০-৪০৫০০ পে ইন ব্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷ করণিক লাইব্রেরিয়ান ও শিক্ষা কর্মীদের আর্থিক বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে সুনির্দিষ্ট পে প্রদান করতে হবে৷ মাদ্রাসা সহ প্রতিটি বিদ্যালয় নৈশ প্রহরী ও ঝাড়ুদার নিয়োগ করতে হবে ও ভোকেশনাল ডিপার্টমেন্টে নিযুক্ত নৈশ প্রহরীদের উপযুক্ত বেতন প্রদান করা, শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থে সিলেবাসের পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমস্ত শিক্ষক সংগঠন সহ শিক্ষকদের মতামত গ্রহণ করা, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের নতুন বিদ্যালয় যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে পে প্রটেকশন অবশ্যই নিশ্চিত করা, সরকারি কর্মচারীদের সাথে সমতা রেখে সকল শিক্ষক শিক্ষা কর্মীদের স্বাস্থ্য সাথীর বদলে হেল্থ স্কিমের আওতায় আনা, ৮-১৬-২৪ বছরের অভিজ্ঞতা জনিত ইনক্রিমেন্ট চালু ও আর্নড লিভ ও লিভ এনক্যাশমেন্ট চালু করা ও বিএড জনিত কারণে স্টপ ইনক্রিমেন্ট ও এরিয়ার প্রদান করার দাবি জানানো হয়েছে৷