কলকাতা: সল্টলেকে উন্নয়ন ভবনের সামনে চলছে প্রাথমিক শিক্ষকদের টানা ৮ দিনের অনশন৷ রাজপথে শিক্ষকদের অনশন রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়েছে পৌঁছে গিয়েছে দেশের রাজনীতিতেও৷ জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ পেয়েছে শিক্ষকদের অনশন অন্দোলন৷ এবার অশনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ আজ সকালে শিক্ষকদের অনশন মঞ্চে গিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ৷
এদিন তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার কত নির্মম হয়ে গিয়েছে৷ এই সরকারের আমলে মেলা-ঠেলা-লীলায় কম টাকা খরচ হচ্ছে না৷ কিন্তু, শিক্ষকদের নেয্য দাবি মানছে না৷ আজ দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকদের রাস্তায় নেমে অনশন করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ এটা কী হচ্ছে কী? আপনারা আপনাদের লড়াই চালিয়ে যান, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি৷ তবে, একটা বলব, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত আপনাদের সঙ্গে কথা বলা৷ আর মুখ্যমন্ত্রী যদি না পারেন, তাহলে বলে দিক, তিনি পারেবন না৷ কিন্তু, চোখরাঙানি কেন দেবেন৷ আজ সরকারি কর্মীদের ডিএ পাচ্ছে৷ রাজ্য যখন পঞ্চম বেতন কমিশন চলছে, তখন কেন্দ্র সপ্তম বেতন কমিশন চালু করে দিয়েছে৷ তাই বলছি, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান, আমরা সঙ্গে আছি৷’’
অন্যদিকে, অশনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী৷ খুব শীঘ্রই সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল ত্রিপাঠী৷ এই বিষয়ে রাজ্যকে নির্দেশও পাঠাতে পারেন রাজ্যপাল৷
শিক্ষকদের অনশন ইস্যুতে ইতিমধ্যেই সুর নরম করেছেন শিক্ষামন্ত্রীও৷ খুব সম্ভবত শিক্ষামন্ত্রী সোমবার অনশনমঞ্চে যেতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ শনিবার শিক্ষামন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছেন না৷ শিক্ষকরা রাস্তায় শুয়ে আছেন৷ দুটোই ঠিক হচ্ছে না৷ দেখতেও খারাপ লাগছে৷ আমি ওদের অনশন তুলে নিতে বলবো৷ আমিও ওঁদের সঙ্গে কথা বলব৷ কিন্তু, রাজ্যের আর্থিক অবস্থার মধ্যে যেটা বাস্তব সেটাই হবে৷ আমার নিশ্চয়ই দেখে নেব৷ কিন্তু আমি আবার বলছি, ওরা যেন অনশন তুলে নেন৷ ওরা রাস্তায় শুয়ে আছেন৷ দেখতেও খারাপ লাগছে৷ দেখি, আমি নিজেও যোগাযোগ করব৷’’
সর্বভারতীয় কাঠামো মেনে বর্ধিত বেতনের দাবিতে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ গত শনিবার থেকে অনশনে বসেছেন ১৮ জন প্রাথমিক শিক্ষক৷ তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে৷
অভিযোগ, প্রাথমিক শিক্ষকদের যোগ্যতা বাড়লেও বাড়েনি বেতন৷ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সর্বাধিক ২৫ হাজার টাকার কাছাকাছি৷ অথচ সর্বভারতীয় স্তরে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ক্রম হাজার ৩৩ হাজার টাকা৷ শিক্ষামন্ত্রীর বেতন বৈষম্য মিটাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে দাবি আন্দোলনকারীদের৷ কিন্তু, এই আন্দোলন করতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের বদলি করেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷ তাঁদের পুরনো জায়গায় ফেরানোর দাবি জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা৷
এই প্রসঙ্গে বেলা সাহা বলেন, ‘‘আন্দোলন করার জন্য আমাদের ১৪ জন সহকর্মীকে প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে প্রতিহিংসামূলক ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে৷ তার জন্য আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে আবেদন করেছি৷ যত দ্রুত সম্ভব সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া জন্য৷ তিনি আমাদের কথা দিয়েছিলেন৷ আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন যে আমি যত দ্রুত সম্ভব হলে ব্যবস্থা করব৷ কিন্তু, তার পর বেতন বৃদ্ধি ও বদলির নিয়ে এখনও কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেননি শিক্ষামন্ত্রী৷