কলকাতা: কেন এখনও চালু হল পে প্রোটেকশন? কেন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের নতুন বিদ্যালয়ে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে পে প্রোটেকশন নিশ্চিত করা হচ্ছে না? শিক্ষকদের এহেন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী ও বিকাশ ভবনের আমালাদের জবাব শুনে তাজ্জব শিক্ষক মহলের একাংশ৷ শিক্ষামন্ত্রী যা বললেন, তা উড়িয়ে দিয়ে এবার পাল্টা মন্তব্য জুড়ে বসলেন বিকাশ ভবনের কর্তা৷
পে প্রোটেকশন কার্যকর করার দাবিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ও বিকাশ ভবন অভিযান শিক্ষকদের একাংশ৷ শিক্ষকদের বিদ্রোহের মুখে পড়ে শিক্ষামন্ত্রী অবশেষে প্রতিক্রিয়া দিলেও তা পত্রপাট খারিজ করে দিলেন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার৷
শিক্ষকদের অভিযোগ, বিধানসভায় ঘোষণা করা সত্ত্বেও এখনও পে প্রোটেকশনের নির্দেশ হাতে পাচ্ছেন না নতুন স্কুলে যোগদানকারী শিক্ষকরা৷ অবিলম্বে তা কার্যকর করার দাবিতে আজ শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে অবস্থান করেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্যরা৷ পরে শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী৷ শিক্ষক সংগঠনের তরফে বিশ্বজিৎ মিত্র ও অনিমেষ হালদার জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, শিক্ষকদের পে প্রোটেকশন অনুমোদন পার্থবাবু দিয়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু, আধিকারিকরা তাঁরা এখনও কার্যকর করতে পারেননি৷ ফাইল আটকে আছে বিকাশ ভবনে৷
শিক্ষামন্ত্রীর তরফে এহেন বার্তা পাওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়ি থেকে সটান বিকাশ ভবনে চলে যান শিক্ষকরা৷ শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন দেওয়ার পরও কেন পে প্রোটেকশন কার্যকর হচ্ছে না? তা জানতে আজ বিকাশ ভবনে গিয়ে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার তরুণ কুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষকদের একাংশ৷ অভিযোগ, শিক্ষকদের একাংশ তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে তরুণবাবু সঙ্গে কথা বলা চেষ্টা করলেও দুর্ব্যবহার করেন তিনি৷ শিক্ষকদের প্রশ্ন শুনে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এই নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না৷ পে প্রোটেকশন নিয়ে তিনি আরও কোনও মন্তব্য না করে শিক্ষামন্ত্রীর দাবি কার্যত উড়িয়ে দেন৷
যদিও, এই শব্দটুকু শুনতে বেলা একা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন শিক্ষকদের একাংশ৷ শিক্ষামন্ত্রী ও বিকাশ ভবনের আমাদের মন্তব্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষকদের একাংশ৷ পে প্রোটেকশন কার্যকর করার দাবিতে আগামী সপ্তাহে বড়সড় আন্দোলনের ডাকার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্যরা৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা কমিটির সদস্য অনিমেষ হালদার৷
অভিযোগ, কর্মরত শিক্ষকরা SLST দিয়ে নতুন স্কুলে যুক্ত হওয়ার পর পাচ্ছেন না চাকরির কনটিনিউয়েশন। নতুন স্কুলে নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁরা জানতে পারছেন, তাঁদের ইনিশিয়াল পে নিতে হবে৷ অতএব ৩-১৫ বছর চাকরি করার পর এখন তাঁদের মাসিক বেতন এক ধাক্কায় ৫-২০ হাজার টাকা কমে গিয়েছে৷
গত ৪ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় শিক্ষাদপ্তরের বাজেট পেশ করে কর্মরত শিক্ষকদের আর্থিক লোকসান ঠেকাতে পে প্রোটেকশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান৷ কর্মরত শিক্ষকদের একটা বড় অংশই বাড়ির কাছাকাছি আসার জন্য চাকরির পরীক্ষায় বসেছিলেন৷ মাধ্যমিক শিক্ষকরা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে উচ্চতর বেতনের আশায় পরীক্ষায় বসেছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার পর তাঁরা সংশ্লিষ্ট ধাপের ন্যূনতম বেতন পাচ্ছেন৷ দীর্ঘদিন চাকরি করে আসার ফলে তাঁরা সিনিয়রিটি, বর্ধিত বেতন, সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন৷ কারও কারও মাসিক লোকসানের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্তও রয়েছে৷ বাজেট নিয়ে আলোচনায় এই প্রসঙ্গ তোলেন বিরোধী দলের সদস্যরা৷ জবাবি ভাষণে কর্মরত শিক্ষকদের পে প্রোটেকশনের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী৷ অভিযোগ, বিধানসভায় ঘোষণা হলেও এখনও তা কার্যয়ক হয়নি৷
এই প্রসঙ্গে শিক্ষক নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘আজ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মরত অবস্থায় SSC দিয়ে নতুন স্কুলে যোগদানকারী পে প্রটেকশন না পাওয়া প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা এসেছিলেন। STEA সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্রর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা করেন৷ তিনি বলেন পে প্রটেকশন সংক্রান্ত ফাইল তাঁর কাছে এসেছিল৷ তিনি তা সই করে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন৷ বিকাশ ভবনের আধিকারিকরা এ বিষয়ে বাকিটা বলতে পারবেন৷ এরপর সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে আমি বিকাশ ভবনে আসি৷ প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর কমিশনার (IAS) তরুণ কুমার মুখোপাধ্যায় জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। মন্ত্রীর কথা বললেও তিনি তা শোনেননি৷ পার্থবাবু পারিবারিক ও রাজনৈতিক কাজে খুব ব্যস্ত আছেন জানিয়ে অন্য কোনও বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেননি৷ D.El.Ed. পাশ করা শিক্ষক যাঁরা ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন না তাঁদের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা বলা না গেলেও বিকাশ ভবনের এক আইএএস আধিকারিক জানান, রাজ্য শিক্ষা দপ্তর থেকে কেন্দ্রের মিনিস্ট্রি অফ হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট দপ্তরে চিঠি করা হয়েছে যাতে সকলকে এই ইনক্রিমেন্ট দেওয়া যায়৷ তাই কয়েক দিন দেরি হচ্ছে৷ খুব শীঘ্রই অর্ডার বেরিয়ে যাবে বলে তিনি জানান৷ তবে বিশ্বজিৎবাবুর সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আগামী সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে এই ডিএলএড ও পে প্রোটেকশন ইস্যুতে মন্ত্রী ও আধিকারিকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে বঞ্চিত শিক্ষকদের নিয়ে আলাদা আলাদা ডেপুটেশন সংগঠিত করা হবে৷’’