গঙ্গারামপুর: পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা ও সম কাজে সম বেতনের দাবিতে এবার যুদ্ধ ঘোষণা রাজ্যের কয়েক হাজার পার্শ্বশিক্ষক৷ আগামী ১৬ আগস্ট বিকাশভবনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান বিক্ষোভের বসার ডাক দিয়ে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ৷ এবার সেই যুদ্ধ ঘোষণার প্রস্তুতি একবার সেরে ফেললেন বাংলার কয়েক হাজার পার্শ্বশিক্ষক৷
পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা ও সমবেতনের দাবি নিয়ে পার্শ্বশিক্ষকদের বিদ্রোহের প্রস্তুতি সভা হল গঙ্গারামপুরের৷ রাজ্য পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের ডাকে এদিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের ঠ্যাঙ্গাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হল পার্শ্বশিক্ষকদের ব্লকভিত্তিক প্রস্তুতি সভা। সেই সভা থেকে তারা পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা ও সমবেতনের দাবিতে সোচ্চার হন। দীর্ঘ বঞ্চনার শিকারের জন্য তারা সরকারের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেন৷
এদিন সভায় গঙ্গারামপুর ব্লকের পার্শ্ব শিক্ষক ও শিক্ষিকারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের জেলা আহ্বায়ক মিনারুল ইসলাম, রহমত আলি মণ্ডল, মেহেরাজ আলি, তাপস সরকার প্রমুখ৷ পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের অন্যতম জেলা আহ্বায়ক মিনারুল ইসলাম পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ ও ১৬ আগস্টের কর্মসূচি নিয়ে এক বিস্তারিত বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ সরকারি বা বিরোধী কোন প্রকার সংগঠন নয়। রাজ্যের সাধারণ পার্শ্ব শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের সম্মিলিত এক মঞ্চ যেখানে কয়েকটি পার্শ্বশিক্ষক সংগঠন যুক্ত আছেন। পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ সরকারের বিরোধী নয়, পার্শ্বশিক্ষক বঞ্চনার বিরোধী। যতদিন পার্শ্বশিক্ষকরা বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে না ততদিন ঐক্যমঞ্চ লড়াইয়ের ময়দানে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ১৬ তারিখের পার্শ্বশিক্ষক আন্দোলন এক ঐতিহাসিক শিক্ষক আন্দোলন দেখবে রাজ্যবাসী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের বিক্ষোভ অবস্থান চলবে। পার্শ্বশিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবি থেকে বহুদিন ধরেই বঞ্চিত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে পার্শ্বশিক্ষকদের তিন বছরের মধ্যে পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আজ ৮ বছর হতে চলেছে তা এখনও অধরা। একই স্কুলে একই টেবিলে একই স্কুলে বিগত ২০০৪ সাল থেকে পার্শ্বশিক্ষকরা সহশিক্ষকের সমকাজে লিপ্ত। কিন্তু, এখন পর্যন্ত তারা ভাতা প্রথা থেকে বেতনে উন্নিত হতে পারেনি। বিগত বাম সরকারের আমলেও তারা যেমন বঞ্চিত থেকেছেন তেমনি বর্তমান সরকারের আমলে তারা আরও বেশি বঞ্চিত। সরকার ১০-১৩ হাজার মাসিক ভাতা দিচ্ছেন যা বর্তমান বাজারে এক অদক্ষ শ্রমিকের মাসিক পারিশ্রমিকের প্রায় সমান, একজন গ্রুপ ডি কর্মচারীর মাসিক বেতনের থেকেও অনেক কম। এরাজ্য ব্যতীত অন্য কোথাও খুজে পাওয়া যাবে না যেখানে শিক্ষকের থেকে একজন গ্রুপ ডি কর্মীর বেতন বেশি। এটা শিক্ষিত সমাজ তথা জাতির কলঙ্ক। শিক্ষকরা হলেন জাতির মেরুদন্ড, মানুষ গড়ার কারিগর। তারাই যদি অভুক্ত থাকেন তাহলে মানুষ তৈরি হবে কি করে ? জাতির মেরুদন্ডই বা সোজা থাকবে কি করে ? তাই সরকার পার্শ্বশিক্ষকদের দ্রুততার সঙ্গে পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দিয়ে সমবেতন চালু করুক। এই দাবি আমাদের ন্যায্য দাবি এবং আমাদের অধিকার। এই দাবি নিয়েই পার্শ্বশিক্ষকরা আগামী ১৬ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের অবস্থান বিক্ষোভ নিয়েছেন। যতদিন সরকার তাদের দাবি মান্যতা দেবে না ততদিন অবস্থান বিক্ষোভ চলবে।
এদিন ব্লক আহ্বায়ক নবনিতা সাহা ও সুজিত ঘোষসহ ব্লকের কয়েকজন পার্শ্বশিক্ষক ও শিক্ষিকা সভায় দাবি নিয়ে বক্তব্য রাখেন৷ উপস্থিত সকলকে ১৬ আগস্টের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। উপস্থিত সকল পার্শ্বশিক্ষক ও শিক্ষিকারা তাতে সহমত পোষণ করেন ও দাবি নিয়ে সোচ্চার হন৷ রীতিমত এদিন সভা থেকে তারা পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা ও সমবেতন নিয়ে হুঙ্কার দিয়েছেন৷ তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ থেকে সরছেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়৷