কলকাতা: এক সপ্তাহের ব্যবধানে পে প্রোটেকশন সমস্যা সমাধানে জোড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য সরকার৷ গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের পর এবার উচ্চতর পদে অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েট থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কেলের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি বিকাশ ভবনের৷ ফলে, এখন থেকে পাস বা অনার্স গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের পাশাপাশি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকরাও পে প্রোটেকশনের আওতায় পড়বেন৷
স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তরফে ৬ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের পে প্রোটেকশনের আওতায় এনেছে৷ এর আগে গত পয়লা আগস্ট পে প্রোটেকশনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ১ আগস্ট যাঁদের বয়স ৪০ বছর বা তার কম সেই সমস্ত গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক পে প্রোটেকশনের সুবিধা পাবেন৷ সংরক্ষিত শ্রেণিভুক্ত শিক্ষকরাও বয়সের ছাড় পাবেন৷ ফলে বাড়ির কাছাকাছি স্কুল পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা শেষ আরএলএসটিতে বসে সফল হয়ে নতুন জায়গায় যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা পে প্রোটেকশন পাবেন৷
দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা পে প্রোটেকশন ব্যবস্থা নতুন করে চালু করার বিষয়ে গত ৪ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় শিক্ষাদপ্তরের বাজেট পেশ করে প্রস্তাব দেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কর্মরত শিক্ষকদের আর্থিক লোকসান ঠেকাতে পে প্রোটেকশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি৷ কিন্তু, মন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেও তা কার্যকত হতে সময় লাগল প্রায় ১ মাস৷ তাও আবার ধর্না, বিক্ষোভ, অবস্থানের পর৷
কর্মরত শিক্ষকদের একটা বড় অংশই বাড়ির কাছাকাছি আসার জন্য চাকরির পরীক্ষায় বসেছিলেন৷ মাধ্যমিক শিক্ষকরা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে উচ্চতর বেতনের আশায় পরীক্ষায় বসেছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার পর তাঁরা সংশ্লিষ্ট ধাপের ন্যূনতম বেতন পাচ্ছেন৷ দীর্ঘদিন চাকরি করে আসার ফলে তাঁরা সিনিয়রিটি, বর্ধিত বেতন, সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন৷ কারও কারও মাসিক লোকসানের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা পর্যন্তও রয়েছে৷ বাজেট নিয়ে আলোচনায় এই প্রসঙ্গ তোলেন বিরোধী দলের সদস্যরা৷ জবাবি ভাষণে কর্মরত শিক্ষকদের পে প্রোটেকশনের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী৷ বিধানসভায় ঘোষণা হওয়ার পরও তা কার্যয়ক না হওয়ায় গত মাসের শেষে শিক্ষামন্ত্রী ও বিকাশ ভবনের আমলাদের দ্বারস্ত হন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্যরা৷
পে প্রোটেকশন কার্যকর করার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ও বিকাশ ভবন অভিযান শিক্ষকদের একাংশ৷ শিক্ষকদের বিদ্রোহের মুখে পড়ে শিক্ষামন্ত্রী প্রতিক্রিয়া দিলেও তা পত্রপাট খারিজ করে দেন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার৷এই নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়৷ পাল্টা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন শিক্ষক সংগঠনের নেতা বিশ্বজিৎ মিত্র ও অনিমেষ হালদার৷ কিন্তু, আন্দোলনের হুঁশিয়ারির পরপরই অর্থদপ্তরের তরফে প্রকাশিত হয় বিজ্ঞপ্তি৷
পে প্রোটেকশনের বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা কমিটির সদস্য অনিমেষ হালদার জানান, এতদিন কর্মরত শিক্ষকরা SLST দিয়ে নতুন স্কুলে যুক্ত হওয়ার পর পাচ্ছেন না চাকরির কনটিনিউয়েশন। নতুন স্কুলে নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁরা জানতে পারছেন, তাঁদের ইনিশিয়াল পে নিতে হবে৷ অতএব ৩-১৫ বছর চাকরি করার পর এখন তাঁদের মাসিক বেতন এক ধাক্কায় ৫-২০ হাজার টাকা কমে গিয়েছে৷ শিক্ষকদের প্রতি এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমরা প্রায় ৮ মাসের লাগাতার লড়াই চালিয়ে গিয়েছি৷ বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকা বন্ধুদের নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে৷ এই জয়ের অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন অবশ্যই বিশ্বজিৎ মিত্র৷ বিজ্ঞপ্তি দেখে আনন্দে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না৷ সকলকে অনেক অভিনন্দন৷’’