পশ্চিম এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব এবং ইরান। এই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চিরকালের। দ্বন্দ্বের বহু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ্য তেল এবং আমেরিকার সান্নিধ্য। এছাড়াও নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে বারংবার ঝামেলায় জড়িয়েছে ইরান এবং সৌদি আরব। এহেন দুই দেশকে এবার এক করল চীন। ঝগড়া নয়, বন্ধুত্ব স্থাপন করাতে মধ্যস্থতা করছে চীন।
পশ্চিম এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ ইরান এবং সৌদি আরবের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। পারস্য উপসাগর এই দুই দেশকে আলাদা করেছে। দূরত্ব বেশি না হওয়ায় দুই দেশ একে অপরের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পরিচিত। আর যার দরুন ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক আদায় কাচকলা। অনেকটা ভারত-পাকিস্তানের মতো।
আর এই আদায় কাঁচকলা সম্পর্ককে বন্ধুত্বের রূপ দিতে নাক গলিয়েছে চীন। শুধুই বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করাই নয়, দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্থাপিত হয়েছে এই বেইজিংয়ের হাত ধরেই। জানা গিয়েছে, গত ১০ মার্চ ইরান ও সৌদির প্রতিনিধিরা চীনের এক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তাতে বলা হয়েছে, দুই দেশই আগামী দু’মাসের মধ্যে দূতাবাস খুলে দেবে।
আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ভাল নয়। সৌদির সঙ্গেও গত কয়েক বছরে ওয়াশিংটনের মতের অমিল প্রকাশ্যে এসেছে। তবে কি, চিনের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আমেরিকাকেই বার্তা দিতে চাইল সৌদি? যদিও পশ্চিম এশিয়ায় চীনের এই সক্রিয়তাকে ভালো চোখে দেখছে না আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি। ইরান আর সৌদির দ্বন্দ্ব মিটিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঠিক কী করতে চাইছেন? তা নিয়ে চিন্তার পড়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
এর পিছনে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই। শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্থাপন করে বিশ্বে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চাইছে চীন। আর তার জন্যই এই উদ্যোগ বলে দাবি করেছে বেজিং। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্যও চীন উদ্যোগী হয়েছিল। সিরিয়া বিতর্কেও হস্তক্ষেপ করেছিল চিন। এবার সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করিয়ে নিজেদের আরো এক ধাপ এগিয়ে রাখল বিশ্বে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত প্রকল্পে।
তবে শুধু যে বিশ্ব নিরাপত্তা সুনিশ্চিত প্রকল্পের জন্যই ইরান এবং সৌদি আরবের শান্তি সুরক্ষা স্বাক্ষর করানো হয়েছে তাই নয়। এর পিছনে চীনের আরো একটি উদ্দেশ্য আছে। তা হলো…পশ্চিম এশিয়ায় তাদের মূল লক্ষ্য তেলের খনি এবং সেই সংক্রান্ত বাণিজ্য। সেই বাণিজ্য যাতে অটুট থাকে, তার জন্যই মূলত এই শান্তি সুরক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে চীন। এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
চীনের এই অতি সক্রিয়তা সমস্যা ডেকে আনতে পারে আমেরিকা সহ পশ্চিমি দেশগুলিতে। ভাবছেন কীরকম? ভেবে দেখুন,চিনের হস্তক্ষেপের পর আর কোনও দেশ এই এলাকার রাজনীতিতে নাক গলাতে চাইবে না। যার ফলে আখেরে লাভ তো বেজিংয়েরই হবে। শুধু তাই না ইরান এবং সৌদি আরবের বন্ধুত্ব স্থাপনের পেছনে রয়েছে ভারতকে কোন ঠাসা করারও একটা মতলব। একটু স্পষ্ট করে বললে, ভারতের পশ্চিমে রয়েছে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড। সেই ভূখন্ডে আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে বেজিং। এব্যাপার পাকিস্তানের সঙ্গেও চীনের ভালো সম্পর্ক। আফগানিস্তানের রাজনীতিতেও মধ্যস্থতা করে বেজিং। এবার ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে শান্তিরক্ষা চুক্তি করিয়ে নিজেদের পজিশন ভালো রাখার চেষ্টা করছে চীন। অন্যদিকে ভারতকে এক ঘরে করার মতলব আটছে বলেই মনে করছে এদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ।