কলকাতা: ছোট থেকেই বেশ ছিপছিপে গঠন তাঁর৷ কিন্তু পেটটা ছিল বেঢপ৷ যেন ফোলা বেলুন৷ রোগা শরীরে এত বড় পেট দেখে পাড়ার লোকজন মজা করে তাঁর নাম দিয়েছিল ‘প্রেগন্যান্ট ম্যান’৷ কিন্তু কে জানত, এই রসিকতাই একদিন সত্যি হবে৷ সত্যই গর্ভবতী হবেন সঞ্জু ভগত! শুনতে অবাক লাগলেও, সম্প্রতি জানা গিয়েছে এমনই এক ঘটনা৷ ১৯৯৯ সালের কথা৷ নাগপুরের বাসিন্দা সঞ্জু জানতে পারেন তিনি প্রেগন্যান্ট৷ যদিও এই সত্যটা জানতে ৩৬টা বসন্ত লেগে গিয়েছিল তাঁর৷
১৯৯৯ সালে অপারেশন করে সঞ্জুর পেট থেকে বার করে আনা হয় একটি ভ্রূণ! কিন্তু, কী ভাবে পুরুষ শরীরে ভ্রূণ এল, তা নিয়ে ধন্দে পড়েন চিকিৎসকরাও৷ সম্প্রতি ‘ফিটাস ইন ফেটু’ তত্ত্বে সেই ভ্রূণের রহস্য খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ যদিও সে সব তত্ত্বকথা জানার ইচ্ছে নেই ষাটের প্রৌঢ় সঞ্জুর৷ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়ে তিনি বেজায় খুশি৷
সঞ্জুর জন্ম ১৯৬৩ সালে৷ জন্ম থেকেই রোগাটে গড়ন তাঁর৷ হাত-পা রোগা হলেও, পেটটা ছিল উঁচু৷ একেবারেই বেখাপ্পা৷ বয়স যখন কুড়ির কোঠায়, তখনও পেট নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ ছিল না তাঁর৷ লোকে মশকরা করলেও, বিষয়টি নিয়ে তেমন গুরুত্বই দেননি তিনি৷ ফোলা পেট নিয়েই মাঠে-ঘাটে চাষের কাজ করে বেরাতেন৷ দিন আনা-দিন খাওয়া সংসারের জোয়াল ছিল তাঁর কাঁধে। রোজ খাটতে হলে শরীরের দিকে তাকালে চলে না। সময়ও ছিল না সঞ্জুর। তিনি উদাসীন থাকলেও তাঁর বিশালাকৃতি পেট নিয়ে বাড়তে থাকে আশেপাশের লোকজনের টিটকিরি৷ সঞ্জুর বয়স যখন ৩৬, তখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে শুরু করে৷ পেট বাড়তে বাড়তে ডায়াফ্রামে ধাক্কা দিতে শুরু করে৷ শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে৷ অগত্যা মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন নাগপুরের যুবক৷
চিকিৎসক অজয় মেহতা সঞ্জুর চিকিৎসা শুরু করেন৷ প্রাথমিকভাবে তিনি মনে করেছিলেন, পেটের ভিতরে বড় আকারের টিউমার রয়েছে৷ ক্যান্সারের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি ৷ তাই দ্রুত অস্ত্রপচারের পরিকল্পনা করেন৷ অপারেশন টেবিলে উপস্থিত এক চিকিৎসক বলেন, পেটে কেটে টিউমারটা বার করে আনার জন্য ডাক্তার যখন হাত ঢোকান, তখন বুঝতে পারেন এটা টিউমান নয়। পেটের ভিতরে কিছু হাড় রয়েছে। এর পর একে একে সঞ্জুর পেট থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে একটি শিশুর পা, গুচ্ছ চুল, চোয়াল এবং দেহের অন্যান্য অংশ।’’ যা দেখে তখন রীতিমতো স্তম্ভিত চিকিৎসকরা৷ ডাক্তার অজয় মেহতার কথায়, ‘‘আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। একইসঙ্গে সংশয় ও বিস্ময় তৈরি হয়েছিল। মনে হচ্ছিল ওই ব্যক্তির পেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে কারও সঙ্গে করমর্দন করছি!’’
এই বিষয়ে পরবর্তীতে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় এবং তাতেই উঠে আসে ‘ফিটাস ইন ফেটু’ তত্ত্ব৷ ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ জানাচ্ছে, এক্ষেত্রে একটি অপূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ যমজ অন্য ভ্রূণের মধ্যে ঢুকে যায়৷ সঞ্জুর ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছিল৷ সঞ্জু যখন মায়ের গর্ভে ছিলেন, তখন তাঁর যমজ ভাই বা বোনের ভ্রূণ তাঁর পেটে ঢুকে যায়৷ যদিও তেমনটা হলে ধাত্রী যমজ শরীরের মধ্যে অস্বস্তি বোধ করেন৷ কিন্তু সঞ্জু কী ভাবে এতগুলো বছর এভাবে কাটাল, সেটা ভেবেই তাজ্জব চিকিৎসকরা৷ শুধু তাই নয়, এমনটা হলে একটা বা দুটি ভ্রুণ ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মারা যায়৷ কিন্তু সঞ্জুর পেট থেকে ভ্রূণ বার করে আনার পরও সেটি কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল বলে দাবি চিকিৎসকদের৷ প্রতি ৫ লক্ষটি গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একটি ক্ষেত্রে এমন ঘটে।