শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণে কতটা সফল মুখ্যমন্ত্রী? তুঙ্গে চর্চা

কলকাতা: আছে দীর্ঘ দাবি৷ ছিল একরাশ প্রত্যাশা৷ শিক্ষক দিবসে সেই প্রত্যাশা পূরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার দিকে তাকিয়ে ছিলেন বাংলার কয়েক লক্ষ শিক্ষক৷ কিন্তু বাংলার সমাজ গড়ার কারিগরদের প্রত্যাশা পূরণে কতটা সফল হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এই নিয়েই শুরু হয়েছে শিক্ষক মহলে জল্পনা৷ আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষকদের বেশ কিছু বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণে কতটা সফল মুখ্যমন্ত্রী? তুঙ্গে চর্চা

কলকাতা: আছে দীর্ঘ দাবি৷ ছিল একরাশ প্রত্যাশা৷ শিক্ষক দিবসে সেই প্রত্যাশা পূরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার দিকে তাকিয়ে ছিলেন বাংলার কয়েক লক্ষ শিক্ষক৷ কিন্তু বাংলার সমাজ গড়ার কারিগরদের প্রত্যাশা পূরণে কতটা সফল হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এই নিয়েই শুরু হয়েছে শিক্ষক মহলে জল্পনা৷

আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষকদের বেশ কিছু বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ৮০ জন শিক্ষকের হাতে শিক্ষাররত্ন পুরস্কার তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেরা স্কুলের হাতে সেরার শিরোপা তুলে দিয়েছেন মমতা৷ শিক্ষা দপ্তরের জমকালো অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ দিকে তাকিয়ে ছিলেন বাংলার অধিকাংশ শিক্ষক৷

বিরোধীমহল থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সুখবর পাওয়ার অপেক্ষা করেছিলেন৷ কিন্তু, আদতে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া ছাড়া খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোনও ঘোষণায় করতে পারেননি বলেই মনে করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷ মুখ্যমন্ত্রীর আধঘণ্টার ভাষণে পে-প্রটেকশন চালুর করার আশ্বাস সহ শিক্ষকদের বদলি নীতি সরলীকরণের বিষয়টি ছাড়া সেভাবে আর কোনও বিষয় উঠে আসেমনি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষা দপ্তরকে ‘মানবিক’ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বটে৷ কিন্তু শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলতে গিয়েই রাজ্য কোষাগারের পরিস্থিতি তুলে ধরে কিছুটা ‘সহানুভূতি’ নেওয়ার চেষ্টা করেন বলেই মনে করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷

কেননা দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষকদের একাংশ দাবি করে আসছেন, ডিএলএড প্রাপ্ত শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট চালু, গ্রাজুয়েট টিচারদের টিজিটি স্কেল চালু করা পাশ গ্রাজুয়েট, অনার্স ও পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের গ্রেড পে বৃদ্ধি, মিউচুয়াল ট্রান্সফার ফিরিয়ে আনা, পার্শ্ব শিক্ষকদের সমকাজে সম বেতন, কম্পিউটার শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের সমস্যা, এসএসকে-এমএসকে শিক্ষকদের সমস্যা, শিক্ষাবন্ধুদের বেতন বৃদ্ধির দাবি, শিক্ষক কর্মীদের দাবি-দাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষার মানোন্নয়নে স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রসঙ্গটিও মুখ্যমন্ত্রী সে ভাবে তুলে ধরতে পারেননি বলেই শিক্ষকদের অভিযোগ৷

তবে মিউচুয়াল ট্রান্সফার ও পে প্রটেকশনের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নিশ্চিত করলেও জানাতে পারেননি শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি রাজ্য সরকার মেনে নেবেন কি না! এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগারের বিপুল সংকটের কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন৷ এমনকি কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে টাকা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তুলেছেন৷ আর এই নিয়েই শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷

এই প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আজ এই ভাষণে শিক্ষকরা অনেক কিছু প্রত্যাশা করেছিলেন৷ কিন্তু সেই প্রত্যাশা মুখ্যমন্ত্রী মেটাতে পারলেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ কেননা শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খুব একটা বেশি শব্দ খরচ করেননি৷ এছাড়াও শিক্ষার মান উন্নয়ন, পাশ ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনা, মিড ডে মিলের সুবন্দোবস্ত নিয়ে পরিষ্কার কোনও ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করেনি৷ এছাড়াও কবে বেতন কমিশন চালু হবে, মহার্ঘ ভাতা কবে রাজ্য সরকার মেটাবে, তা নিয় মুখ্যমন্ত্রী সেভাবে কোন বার্তা এখনও পর্যন্ত দিতে পারেননি৷ তবে, শিক্ষারমান উন্নয়নে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাজ থেকে আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল শিক্ষকদের৷’’

সরকারের আয়োজিত শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ প্রসঙ্গে শিক্ষক নেতা তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘শিক্ষক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে বুকভরা আশা নিয়ে নিয়ে উপস্থিত শিক্ষকরা শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন৷ সারা বছর নানা লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, কটুবাক্য সহ্য করেও শিক্ষকরা বহু আশা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে গিয়েছিলেন শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে৷ মুখ্যমন্ত্রী যদি কিছু সুরাহা করেন৷ কিন্তু শিক্ষকদের কোনও সমস্যার সুনিশ্চিত সুরাহা না করে শুধু আশার বাণী শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ শিক্ষকরা আশা করে ছিলেন, PRT/TGT/D.A/Pay Commission/Transfer/Pay fixation ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আদোতে টাকা নেই৷ কোথায় পাব টাকা৷ কেন্দ্র টাকা দেয় না৷ ইত্যাদি পুরানো কথার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন৷ ফলে একথা বলা যায়, আজ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষকদের প্রাপ্তি শূণ্য৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =