কাঁটা এল নিনো, ছ্যাঁকা লাগতে পারে চালের দামেও, শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

কাঁটা এল নিনো, ছ্যাঁকা লাগতে পারে চালের দামেও, শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

 কলকাতা: বাজারে সবজির দাম এখন আকাশ ছোঁয়া৷ টমোটো, আদা থেকে লঙ্কা, সবই যেন অগ্নিমূল্য৷ এরই মধ্যে দু’মুঠো ভাত নিয়েও চিন্তায় বাড়ছে আমআদমির৷ কারণ এবার ছ্যাঁকা লাগতে পারে চালের দামেও৷ 

ভারত-সহ গোটা বিশ্বে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম৷ যা গত ১১ বছরে সবথেকে বেশি৷ বিশ্বের প্রধাণ চাল উৎপাদনকারী ছ’টি দেশ  ভারত, চিন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে চলতি কৃষিবর্ষে রেকর্ড উৎপাদনের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও চালের দাম কমার কোনও সম্ভাবনাই নেই৷ উল্টে তা আরও বাড়তে পারে৷ এর নেপথ্যে রয়েছে এল নিনোর কাঁটা৷ যার দাপটে প্রভাব পড়ছে আবহাওয়ায়৷ 

ভারতে খাদ্যপণ্যের দাম যে আরও চড়া হবে, ইতিমধ্যেই সেই ইঙ্গিত মিলেছে অর্থ মন্ত্রকের অ্যানুয়াল ইকোনমিক রিভিউয়ে৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্যপণ্যের দাম একলাফে দ্বিগুণ হয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবল তাপপ্রবাহের সঙ্গে বৃষ্টির মন্দা শাক-সবজির উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে৷ সেই কারণেই দাম এত চড়া হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অ্যানুয়াল ইকোনমিক রিভিউতে মিলেছে অশনি সঙ্কেত৷ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই রিভিউতে বলা হয়েছে, এল নিনোর প্রভাবে বাজারের পরিস্থিতি আরও খারপ হতে পারে৷ এর নেপথ্যে এল নিনোর ক্ষতিকারক প্রভাব তো রয়েইছে, পাশাপাশি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী রিটেল ইনফ্লেশন-এর উপর হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স কমার প্রভাব দেরিতে অনুভূত হওয়া৷ 

বর্তমানে বিশ্বের বাজারে মোট চালের প্রায় ৪০ শতাংশ রফতানি করা হয় ভারত থেকে। এছাড়াও সারা বিশ্বে ভারতই সবচেয়ে সস্তায় চাল সরবরাহ করে থাকে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের চালের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ গত মাসে চালের সহায়ক মূল্য ৭ শতাংশ বাড়ার পর ভারতে রফতানি করা চালের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে৷ যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ৷ 

বিশ্ব জুড়ে ৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছে চান প্রধান খাদ্যশস্য। ফলে চালের মূল্য বৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তার বিষয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষদের জন্য চালের মূল্যবৃদ্ধি উদ্বেগের। বিশ্বের ৯০ শতাংশ ধানই এশিয়ায় উৎপাদিত হয়৷ আর এশিয়ায় ধানের ফলন সম্পূর্ণভাবেই জলবায়ু এবং বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল৷ বর্ষার মরশুমে সঠিক পরিমাণে বৃষ্টি না হলে ধানের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এল নিনোর দাপটে ধান চাষের বিপুল ক্ষতি হতে পারে। কারণ এল নিনোর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়। যদিও এই বছর বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে বলেই আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এল নিনোর প্রভাবের আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু, লক্ষ্যণীয় বিষয় হল,  আবহাওয়া সংক্রান্ত কারণে উৎপাদন প্রভাবিত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী চালের মূল্যের সূচক ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে গেল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *