বেঙ্গালুরু: শুক্রবার দুপুর ঠিক ২টো বেজে ৩৫ মিনিট৷ শুরু কাউন্ট ডাউন৷ ৩..২..১..৷ সবুজ সঙ্কেত মিলতেই পৃথিবীর মাটি ছেড়ে উড়ে গেল শক্তিশালী রকেট। পেল্লায় জিএসএলভি রকেটে চেপে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণ করেন বিজ্ঞানীরা। এই বিশেষ মুহূর্তের জন্য সকাল থেকেই প্রহর গুনছিলেন দেশবাসী। ২০১৯-এর ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন রোমাঞ্চে মাতল নেটিজেনরা৷
চন্দ্রযান ৩-এর অভিযান সফল হলে, আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পর ভারতই হবে বিশ্বের চতুর্থ দেশ, যাদের পাঠানো মহাকাশযান চাঁদের মাটি ছোঁবে। চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য কামনা করে আগেই তিরুপতি মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। শুক্রবার সফল ভাবে আকাশে উড়ল চন্দ্রযান৷ উৎক্ষেপণস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রকের মন্ত্রী শ্রী জিতেন্দ্র সিং।
ইসরোর এই চাঁদের সফরের কেন্দ্রে রয়েছে এলভিএম-৩ রকেট। যা চন্দ্রযান ৩ কে শক্তি জোগাবে এবং পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে পৌঁছে দেবে। এর আগেও বহুবার কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সময় এলভিএম-৩ রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। একেই বলা হয় ভারতীয় রকেটের ‘বাহুবলী’ ৷ রকেটটি লম্বায় প্রায় ৪৩.৫ মিটার। উচ্চতায় দিল্লির কুতুব মিনারের অর্ধেক হবে। এটি ত্রিস্তরীয় উৎক্ষেপণ যান৷ এর দুটি স্তরে রয়ছে কঠিন জ্বালানি এবং একটি স্তরে মজুত রয়েছে তরল জ্বালানি। কঠিন জ্বালানি ১২৭ সেকেন্ড ধরে জ্বলে। উৎক্ষেপণের ১০৮ সেকেন্ডের মধ্যে জ্বলতে শুরু করে তরল জ্বালানি। সেটি ২০৩ সেকেন্ড ধরে রকেটটিকে চালনা করে। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ এবং রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। সব কিছু ঠিক থাকলে ৪০ দিন পর, আগামী ২৩ থেকে ২৪ অগাস্টের মধ্যে চাঁদের বুকে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩। ‘ইসরো’র তৈরি ‘জিও-সিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (জিএসএলভি)-মার্ক-৩ যাতে সফল ভাবে চাঁদের মাটিতে ল্যান্ড করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে৷
২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-কে চাঁদের পিঠে নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় চন্দ্রযান-২। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু করে ইসরো৷ তবে আগের মিশনে পাঠানো অরবিটরটি এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই এ বার আর নতুন করে কোনও অরবিটার পাঠাবে না চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের মাটিতে অবতরণের জন্য কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারেরই সাহায্য নেবে এ বার চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যাওয়া ল্যান্ডার আর তার ভিতরে থাকা রোভার। চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে অবতরণ করার পর সেখানে দু’সপ্তাহ ধরে গবেষণা চালাবে ইসরো। সেই কাজে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এবং মার্কিন মহাকাশ গবেষনা সংস্থা নাসার সাহায্যও নেওয়া হবে।