আলিপুর: সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত স্টাফ প্যাটার্ন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি তুলল মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি৷ এই মর্মে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে বিক্ষোভ-ডেপুটেশনও দেওয়া হয়েছে শিক্ষক সংগঠনের তরফে৷
ডিআই দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ ও সংক্ষিপ্ত সভার পর মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ জেলা কমিটির সম্পাদক অনিমেষ হালদারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করেন৷ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অনিন্দ্য কুমার চট্টোপাধ্যায় সমিতির বেশ কয়েকটি দাবি ও এই সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে বাস্তব সম্মত বলে স্বীকার করলেও সরকারের আধিকারিক হিসেবে প্রতিনিধি দলকে এই প্রক্রিয়ার সমর্থনে বেশ কিছু যুক্তি দেখান৷
তিনি ডেপুটেশনে উল্লেখ করা সমস্যাগুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাবেন বলে জানান৷ ২৭ সেপ্টেম্বর মধ্যে সব স্কুলকে অনলাইন স্টাফ প্যাটার্নের ডাটা এন্ট্রি ও ফাইনাল সাবমিট করতেই হবে এবং না হলে সেই স্কুলের বেতন বন্ধ করা হবে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয় বলে অনিন্দ্যবাবু জানান৷ তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকদের আপাতত ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। ডিআই দপ্তর থেকে স্পেশাল ক্যাম্প করে সমস্যা মিটিয়ে পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে৷ এই কাজ শেষ করার ব্যাপারে আপাতত চূড়ান্ত কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছেনা বলে তিনি জানান৷ এ বিষয়ে উত্থাপিত বিভ্রান্তিগুলির মধ্যে কয়েকটি দূরীকরণ করতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ প্রকাশ করা হবে বলে তিনি প্রতিনিধিদের আশ্বাস দেন৷ এদিনের ডেপুটেশন কর্মসূচিতে ছিলেন জেলা কমিটির দুই সহ-সভাপতি সূর্যকান্ত হালদার ও আমিতেষ কর, সহ-সম্পাদক বামদেব হালদার, কোষাধ্যক্ষ বিকাশ প্রধান, জেলা কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ হালদার,অভিজিৎ মণ্ডল, জামাল উদ্দিন মণ্ডল সহ পাঁচটি মহকুমার বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা৷
ডেপুটেশনে ক্যানিং মহকুমার প্রতিনিধি ও জেলা কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ হালদার প্রস্তাব দেন, এই STAFF PATTERN MODULE এ বিদ্যালয় গুলির জন্য যদি UNIT সংখ্যা ও ছাত্রছাত্রী সংখ্যা INPUT করার ব্যবস্থা থাকে তাহলে বিদ্যালয়গুলির পদবিন্যাস পৃথক বিদ্যালয় অনুযায়ী পৃথক হয় এবং এর ফলে কিছুটা বিভ্রান্তি কাটানো যাবে। এই বিষয়টির বাস্তবতা এবং যৌক্তিকতা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক মেনে নেন৷ তিনি বলেন, এই প্রথম কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে একজন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বললেন৷ ফলে তিনি তা লিপিবদ্ধ করে তাঁর উচ্চমহলে জানাবেন বলেও আশ্বাস দেন৷
ডেপুটেশনের শেষে এক প্রেস বিবৃতিতে সমিতির জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘বিভ্রান্তিকর এই স্টাফ প্যাটার্নের অর্ডারে সারা রাজ্যের লক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা আতঙ্কিত। এর ফলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহ-শিক্ষকদের এমনকী সহ-শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে৷ আমরা ডিআই স্যারকে ডেপুটেশন দিয়েছি৷ সুনির্দিষ্ট ভাবে একটি রিভাইজড অর্ডার প্রকাশ করা হবে বলে তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন৷ কিন্তু যেহেতু অর্ডার বের করা রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে তাই আমরা বিকাশ ভবনে প্রথমে প্রতিনিধি মূলক ডেপুটেশন এবং তাতে কাজ না হলে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষকদের নিয়ে প্রতিরোধ আন্দোলনে যাব৷ যে কোন মূল্যে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রাজ্যগত স্থগিতাদেশ আদায় করেই ছাড়বো আমরা৷’’
এই অর্ডারে কেন এত আতঙ্কিত বাংলার শিক্ষক সমাজ? এর উত্তরে অনিমেষ বাবু বলেন, ‘‘সামনেই ROPA-2019 ফিক্সেশন। আপার প্রাইমারী নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া চলছে। আবেদনের ভিত্তিতে বদলি(GT) বা অন্যান্য বদলির ব্যবস্থা হচ্ছে না। TGTও PGT স্কেল চালু হচ্ছে না। ফলে, এর আগে হটাৎকরে নরমাল সেকশনের শিক্ষকদের এভাবে বিন্যাস করে দেওয়াকে চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা।’’ তিনি রাজ্যের সমস্ত শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আপনারা প্রস্তুত থাকুন। আমরা সকলকে নিয়ে বৃহত্তর প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবো।’’ প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষক এই অনলাইন স্টাফ প্যাটার্নের কাজে সহ-শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক হলেও কিছু প্রধান শিক্ষক এটাকে সুযোগ হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে ক্ষমতার অপব্যাবহার করছেন৷’