নয়াদিল্লি: দু’বছর আগে নেটপাড়া দেখেছিল ভারতের অন্যতম শিল্পপতি রতন টাটার জন্মদিন পালনের একটি ভিডিয়ো৷ ওই ভিডিয়ো দেখতে রীতিমতো ভিড় জমিয়েছিলেন নেটিজেনরা৷ হবে নাই বা কেন? ওই ভিডিয়ো ছিল রীতি মতো চমকপ্রদ৷ দেশের এতবড় শিল্পপতির জন্মদিন পালন করা হয়েছিল ছোট্ট একটি কাপ কেকের উপর একটি মাত্র বাতি জ্বালিয়ে। যা সকলকে অবাক করেছিল৷ সেই সঙ্গে নজর কেড়েছিল ছিপছিপে ঝাঁকড়া চুলের এক তরুণ৷ তিনিই ছিলেন জন্মদিনের আয়োজক ও একমাত্র অতিথি৷
কে এই যুবক? জানা যায়, তিনি টাটা গোষ্ঠীর পঞ্চম প্রজন্মের এক কর্মী। রতন টাটার প্রিয় বন্ধুও বটে। শান্তনু রতন টাটার অফিসের কাজে নিয়মিত সাহায্য করেন। আবার ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের কোথায় কোন হ্যাশট্যাগ দিতে হবে, কোন ইমোজির মানে কি, সময় পেলে এ সব ব্যপারেও বন্ধুকে তৈরি করেন৷ কিন্তু কী ভাবে ওই তরুণের আলাপ হল টাটা গোষ্ঠীর এক সময়ের চেয়ারম্যান রতন টাটার সঙ্গে? টাটাদের সঙ্গে কি তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল? এমন অসমবয়সি দুটি মানুষ হঠাৎ প্রিয়বন্ধুই হয়ে উঠলেন কী ভাবে?
শান্তনু এক জন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি পুণের বাসিন্দা৷ পড়াশোনা পুণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। টাটাদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের পুরনো পরিচয় থাকলেও শান্তনুর পরিবারের কোনও সদল্য রতন টাটার সঙ্গে সরাসরি কাজ করেননি।
শান্তনু টাটা এলেক্সিতে কাজ শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডিজাইনার ইঞ্জিনিয়র হিসেবে। সেই সময় টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ছিলেন স্বয়ং রতন টাটা। তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব তো দূর অস্ত, নজরে পড়বেন, সেটাও কোনও দিন কল্পনা করতে পারেননি পুণের ওই তরুণ ইঞ্জিনিয়ার৷ সংস্থার জুনিয়র কর্মী। রাতের ডিউটিই থাকত বেশি। কাজের ফাঁকে রাস্তার কুকুরদের দেখভাল করতেন শান্তনু। তিনি দেখেন তাঁর অফিস চত্বরে প্রায়ই কিছু কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। মূলত রাতের দিকেই ঘটনাগুলি ঘটছে৷ পশুপ্রেমী শান্তনু ঠিক করেন কুকুরগুলির গলায় আলো জ্বলা কলার পরাবেন৷ কিন্তু একার হাতে এতবড় কর্মকাণ্ড সামলানো তো সম্ভব নয়৷ তাই পশুপ্রেমীদের নিয়ে তৈরি করে ফেললেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মোটোপজ’। এই ‘মোটোপজ’-ই বদলে দেয় শান্তনুর জীবন৷ শান্তনুর এই উদ্যোগ টাটা এলেক্সি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে৷ বিষয়টি নজর কাড়ে রতন টাটারও৷ তিনি নিজেও একজন পশুপ্রেমী৷ তিনি শান্তনুদের ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করেন৷ সেই থেকেই হয় সূত্রপাত৷ গড়ে ওঠে দু’জনের সম্পর্ক৷
এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেন শান্তনু৷ ভর্তি হন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন রতন টাটা নিজেও৷ বিদেশে পড়তে গেলেও রতনের সঙ্গে বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি তাঁর৷ ফইরে এসে ফের একসঙ্গে কাজ শুরু৷ রতনকে নতুন নতুন স্টার্টআপের ধারণাও দেন শান্তনু৷
মোটোপজের মতোই আরও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে শান্তনু নাইডুর তেমনই একটি চেষ্টার নাম ‘গুড ফেলা’৷ ওই কোম্পানিতে বয়স্কদের প্রয়োজনে সমস্তরকম সুবিধাপ্রদান করা হয়। শান্তনুর এই সংস্থার মূল্য ৫ কোটি টাকারও বেশি। পাশাপাশি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রতি রবিবার শান্তনু “অন ইয়োর স্পার্কস” নামে একটি শো/ওয়েবিনার হোস্ট করেন। এরই মধ্যে এই লাইভ শো-এর সাতটি পর্ব হয়েছে। ওয়েবিনারের জন্য, তিনি প্রতি অংশগ্রহণকারীকে ৫০০ টাকা চার্জ করে থাকেন। উদীয়মান উদ্যোক্তাদের সমর্থন করার জন্য কোভিড পর্বের মাঝেই এই অনলাইন টক শো শুরু করেছিলেন শান্তনু।
রতন টাটাকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি বইও লিখে ফেলেছেন শান্তনু। বইয়ের নাম ‘আই কেম আপন আ লাইটহাউস’। সখানে দু’মলাচে ঘরা পড়েছে বন্ধু রতনের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন মুহূর্তের কথা, তাঁদের বন্ধুত্বের কথা৷