‘দাসত্ব’ চাইছে না সরকার, আমূল বদলে দেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধি কী হচ্ছে

‘দাসত্ব’ চাইছে না সরকার, আমূল বদলে দেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধি কী হচ্ছে

নয়াদিল্লি: ঔপনিবেশিক শাসনে তৈরি হওয়া আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দণ্ড দেওয়া, ন্যায়প্রতিষ্ঠা নয়। তাই ইংরেজদের তৈরি করা সেইসব আইনের বদল আনতে চলছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, এই বদল নিতান্তই জরুরি। এই সিদ্ধান্তের পর ভারতের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কথায়, আগের আইনের লক্ষ্য ছিল ভারতের মাটিতে ইংরেজ শাসনের ভিত্তিকে আরও পাকাপোক্ত করা। তবে বর্তমান সরকার সেই যুক্তিতে বদল আনার কাজ করছে। 

লোকসভায় তিনটি বিল আনা হয়েছে ইতিমধ্যেই ১৮৬০ সালের ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’, ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড’ এবং ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ বদলে হতে চলেছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য। তিনটি বিলই স্ট্যান্ডিং কমিটির বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। আসলে ঔপনিবেশিকতার কোনও চিহ্নই রাখতে চাইছে না দেশের বিজেপি সরকার। তাই এই বিলগুলিতে কিছু আইন নতুন আনা হয়েছে, আবার কিছু আইনে বদল ঘটানো হয়েছে। এই আইনকানুন বদলের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

আগে ছিল ইন্ডিয়ান পিনাল কোড ১৮৬০, এখন হবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩। কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিয়র ১৯৭৩ বদলে হবে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩ এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট ১৮৭২ বদলে করা হবে ভারতীয় সাক্ষ্য ২০২৩। এই প্রেক্ষিতে সবথেকে বড় যে বিষয় তা হল, রাষ্ট্রদ্রোহিতা সংক্রান্ত আইন সম্পূর্ণ ভাবে বাতিল করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন কিছু ধারা সংযোজন করাও হচ্ছে এই ব্যবস্থায়। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রত্যাহার করা হচ্ছে না শুধু রাষ্ট্রদ্রোহিতাকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এই আইনে। তবে এই নিয়ে সরকার যা বলছে তা গুরুত্বপূর্ণ। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলছে, বর্তমানে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে সাজা হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে তিন বছরের জেলের সাজাও দেওয়া হয়। তবে নয়া প্রস্তাবে শুধু তিন বছর জেলের সাজা হতে পারে। কিছু অপরাধের জন্য সাজাও বৃদ্ধি করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। যেমন, গণপিটুনির সর্বোচ্চ শাস্তি হতে চলেছে মৃত্যুদণ্ড। সর্বনিম্ন সাজা সাত বছরের কারাবাস। এ ছাড়াও জরিমানাও করা হবে। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, জন্মস্থান, ভাষা, ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অন্য কোনও কারণে হত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা এমন শাস্তি পাবেন। এছাড়া ঘৃণা ভাষণ বা উস্কানিমূলক ভাষণের ক্ষেত্রে তিন বছরের জেলের সাজা হবে। ধর্মীয় সমাবেশে  উস্কানিমূলক ভাষণের সাজা পাঁচ বছর। নতুন যে ধারা নিয়ে কথা হচ্ছে তা হল ধারা ১৫০ যেখানে বলা হয়েছে, দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্যে বিঘ্ন ঘটানো অপরাধ। এদিকে ধারা ৯৯-এ বলা হয়েছে গণপিটুনিতে মৃত্যু ঘটানো খুনের অপরাধের সামিল। আর ধারা ১১১-তে বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদী কাজের অপরাধের কথা। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × five =