কলকাতা: ফিটমেন ফ্যাক্টর-সহ ন্যায্য বেতনের দাবিতে বুধবার ফের ‘কলকাতা চলো’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন৷ তুঙ্গে শিক্ষক বিদ্রোহের প্রস্তুতি৷কিন্তু, সেই ফিটমেন ফ্যাক্টরের দাবি শিক্ষকদের ক্ষোভকে তীব্র কটাক্ষ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রর৷ শিক্ষক আন্দোলনকে ‘পেশাদারি’ আন্দোলন বলেমন্তব্য শাসকদলের শিক্ষক নেতারা৷ পাল্টা বিদ্রোহ আরও চওড়া হয়েছে ক্ষুব্দ শিক্ষক মহলে৷
আগামী ৬ নভেম্বর উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ‘কলকাতা চলো’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে ফিটমেন ফ্যাক্টর ছিনিয়ে আনার দাবিতে৷ এর আগে যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা ১৫ দিনের অনশন করেন প্রাথমিক শিক্ষকদের এই সংগঠনের ১১ জন শিক্ষক৷ কয়েক হাজার শিক্ষক শিক্ষক রাজপথে দিনরাত এক করে ধর্না দিতে থাকেন৷ অনশন চালাতে গিয়ে মারণ রোগে আক্রান্ত হন ৯ শিক্ষক৷ রাজপথে শিক্ষকদের অনশন-ধর্না গোটা দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় তোলে৷ পর চাপে পড়ে প্রার্থমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করতে কার্যত বাধ্য হয় রাজ্য৷
কিন্তু, নামমাত্র বেতন বৃদ্ধি হলেও ময়াদন ছাড়েনি প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন৷ এবার শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে ফিটমেন ফ্যাক্টরের সুবিধা ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে ফের ‘কলকাতা চলো’ অভিযানে পা মেলাতে চলেছে শিক্ষকদের একাংশ৷ উস্তি শিক্ষক সংগঠনের এই কর্মসূচিকে না করে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রর৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষক সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে৷ আপনারা আগেও দেখেছেন এখানে-ওখানে মিটিং-মিছিল, ভাঙচুর, অনশন করেছেন৷ কিন্তু তাঁরা যে দাবি করেছিলেন, সেই দাবি তাঁদের কোনটাই পূর্ণ হয়নি৷ কিন্তু আমাদের সংগঠনের ডাকা গত ২৫ জুলাই নজরুল মঞ্চে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের স্কেল বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন৷ আন্দোলনটাকে কেউ কেউ পেশা হিসাবে নিচ্ছেন৷ পেশায় পরিণত করেছেন৷ তাঁরা অনেক প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ সেই প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে৷ আমাদের সংগঠন উপযুক্ত জায়গায় আলোচনা করেছে৷ আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, অনেকেই ফিটমেন ফ্যাক্টর নিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে৷ শিক্ষকদের বিপথগামী করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আপনারা শিক্ষিত মানুষ৷ আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের উপর আস্থা রাখুন৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রাখুন৷ আমাদের সংগঠনের উপর আস্থা রাখুন৷ আমরা কথা দিচ্ছি, নিশ্চিন্ত থাকুন, ফিটমেন ফ্যাক্টর নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা৷ অনেকেই বলে দিচ্ছেন, এটা জলভাত৷ সেটাতা নয়৷ জটিল অঙ্ক৷ সেই অংকটা শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে৷ আমরা নিশ্চিত, আপনাদের ফিটমেন ফ্যাক্টর সুখবরটা আমরাই দেব৷’’
তৃণমূলের শিক্ষক নেতাকে পাল্টা দিতে ছাড়েননি উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন৷ সংগঠনের তরফে বেশ কিছু পাল্টা প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ শাসকদলের শিক্ষক নেতারা কি বলতে পারবেন, কেন শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন? শিক্ষকরা কেন প্রতারিত? শিক্ষকদের উপর যখন পুলিশ লার্ঠি চার্জ করে, আক্রান্ত হন, তখন কোন তাঁরা ফেসবুকে বিপ্লব করেন না? কেন করেন না প্রতিবাদ? কেন রাজপথে নেমে ১৪ দিন ধরে শিক্ষকদের অনশন করতে হল? তাতে মুখ পুড়ল কার? শিক্ষক সমাজকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কেন তাঁরা আট বছরেও যথাযথ ব্যবস্থা নিল না? কেন বারবার সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে শিক্ষকদের? অন্য রাজ্যের তুলনায় কেন বাংলার শিক্ষকরা কম বেতন পান? আর সেটা নিয়েই বা কেন প্রতিবাদ করেন না? আধিকার ছিনিয়ে আনতে কেন আন্দোলনের পথে হাঁটতে হয় শিক্ষকদের? এরপরেও কী শাসক দলের নেতারা বলবেন, শিক্ষকদের জন্য তাঁরাই সুখবর দেবেন!