কলকাতা: ভেস্তে গেল প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক৷ মিলল না কোনও রফাসূত্র৷ আধঘণ্টা ধরে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিদের বৈঠকে ফিটমেন ফ্যাক্টরের রফা না হওয়ায় নিজেদের অবস্থানে অনড় তাঁরা৷ বৈঠক ভেস্তে যেতেই নতুন মাত্রা পেতে শুরু করেছে শিক্ষক বিদ্রোহ৷
শিক্ষক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষকদের অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রী৷ সেই শিক্ষামন্ত্রী আজও ফিটমেন ফ্যাক্টরের বিষয়ে সদর্থক কোনও ইঙ্গিত দিতে পারেননি৷ ফলে, দাবি আদায় না হওয়ায় পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের অবস্থান চালিয়ে যাবেন৷ প্রয়োজনে অবস্থান-বিক্ষোভ অনশনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন৷ শিক্ষকদের দাবি, দাবি মানা পর্যন্ত এই অবস্থান-বিক্ষোভ চলবে৷
শিক্ষকদের টানা সাত ঘণ্টার অবস্থান বিক্ষোভ ও পুলিশের বিশাল ব্যারিকেডের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বাঘাযতীন মোড়৷ যাদবপুরের সঙ্গে গড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠক ব্যর্থ হতেই পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে৷ দিনভর বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়তে শুরু করেছে বলে খবর৷
পরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষকদের এই দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়৷ রাজ্য সরকার যতটা পেরেছে করে দিয়েছে৷ কিছুদিন আগেই তাঁদের বেতন বাড়ানো হয়েছে৷ এইভাবে অফিস টাইমে রাস্তা অবরোধ করে শিক্ষকদের বসে থাকা চূড়ান্ত নিন্দনীয় ঘটনা৷ তাঁরা শিক্ষক৷ তাঁদের নিয়মানুবর্তিতা শেখা উচিত৷ এই ভাবে রাস্তা আটকে অন্য কাউকে বিপদে ফেলে নিজেদেরটা বুঝে নেওয়া, তা কখনও হতে পারে না৷ ওরা কী দাবি করছে, আমার জেনে কোন লাভ নেই৷ আমার মনে হয়েছে, ওরা যুক্তিহীনভাবে রাস্তায় বসে পড়েছে৷ লোকের অসুবিধা তৈরি করছে৷ তাঁরা অবিলম্বে এই সমস্ত ধর্না প্রত্যাহার করেনিন৷ ওঁদের যদি বেতন সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকে তাহলে যথোপযুক্ত স্থানে গিয়ে অভিযোগ করুন৷ কিন্তু তাই বলে রাস্তায় নামবেন কেন? রাস্তা, কখনও শিক্ষকদের জায়গা হতে পারে না৷’’
ফিটমেন ফ্যাক্টর-সহ ন্যায্য বেতনের দাবিতে ফের কলকাতার রাজপথে নামলেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আজ দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়৷ শিক্ষামন্ত্রীর নাকতলার বাড়ি ঘেরাও করার লক্ষ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেটের কাছে বিশাল জমায়েত করেন৷ প্রায় প্রায় হাজার দশেক প্রাথমিক শিক্ষকদের মিছিলে কেঁপে ওঠে যাদবপুর চত্বর৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল শুরু হতেই শিক্ষকদের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ৷ বাঘাযতীনে ব্যারিকেড করে রাখে পুলিশ৷ আনানো হয় জলকামান! পুলিশি বাধার মুখে পড়ে বাঘাযতীন মোড়ে বসে পড়েন কয়েক হাজার প্রাথমিক শিক্ষক৷ শুরু হয় পথ অবরোধ৷ পরে শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির দিকে মিছিল এগোতে শুরু করেই ফের পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে পড়তে হয় শিক্ষকদের৷ এদিন মিছিল থেকে ফিটমেন ফ্যাক্টর-সহ ন্যায্য বেতনের দাবি উঠতে থাকে৷ ‘‘চুরি করেছে, চুরি করেছে আমার বেতন সরকার!’’ মিছিল থেকে ওঠে স্লোগান৷
এর আগে যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা ১৫ দিনের অনশন করেন প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের ১১ জন শিক্ষক৷ কয়েক হাজার শিক্ষক শিক্ষক রাজপথে দিনরাত এক করে ধর্না দিতে থাকেন৷ অনশন চালাতে গিয়ে মারণ রোগে আক্রান্ত হন ৯ শিক্ষক৷ রাজপথে শিক্ষকদের অনশন-ধর্না গোটা দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় তোলে৷ পর চাপে পড়ে প্রার্থমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করতে কার্যত বাধ্য হয় রাজ্য৷ কিন্তু, সেখানে ফিটমেন ফ্যাক্টরের বিষয়ে ইতিবাদ কোনও পদক্ষেপ না থাকায় আজ ফের রাজপথে নেমে বিক্ষোভ প্রাথমিক শিক্ষকদের৷