নয়াদিল্লি: পোশাক নিয়ে বরাবারই সচেতন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে তিনি অত্যন্ত সতর্ক৷ শিরসজ্জা নিয়েও বেশ সচেতন তিনি৷ সে প্রমাণ বারবরই মিলেছে৷ ফি বছর স্বাধীনতা দিবসে বক্তৃতা দিতে মাথায় রঙিন পাগড়ি বেঁধে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে প্রতি বারই বদলে যায় তাঁর পাগড়ির রং৷ দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে লাল কেল্লায় মোদী বক্তব্য রাখলেন রংবেরঙের রাজস্থানি বাঁধনি ছাপের পাগড়ি জড়িয়ে। কিন্তু, হঠাৎ রাজস্থানি পাগড়ি কেন? তবে কি পাখির চোখ রাজস্থানের আসন্ন ভোট? মোদীর পোশাক নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে কাটাছেঁড়া।
দেশের পোশাক সচেতন রাজনীতিবিদদের মধ্যে যে মোদী অন্যতম, তা তাঁর অতি বড় সমালোচকেরাও মেনে নিতে বাধ্য। শোনা যায়, এক দিনে দু’জায়গায় ভাষণ দেওয়ার থাকলে মোদীর গাড়িতে নাকি দু’টি আলাদা পোশাক আলাদা জ্যাকেট এবং প্রয়োজনে আলাদা উড়নি রাখা থাকত এক সময়। ফলে স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি যে সন্তর্পনেই পোশাক বাছাই করবেন, তা বলাই বাহুল্য৷
তবে সর্বদা তিনি শিরসজ্জা করেন, তেমনটা কিন্তু নয়৷ মাথায় টুপি বা পাগড়ি বাঁধতে দেখা গেলেও, সবসময় নয়। সময়-সুযোগ এবং উপলক্ষ অনুযায়ী কখনও হ্যাট বা সাফারি ক্যাপ পরেছেন। সাধারণতন্ত্র দিবসে পাগড়ির পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী টুপিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে৷ তবে গত ১০ বছর ধরে স্বাধীনতা দিবসে পাগড়ি ছাড়া অন্য কিছুই পরেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী৷
২০২৪-এ লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটা ছিল তাঁর দশম স্বাধীনতা দিবস। মঙ্গলবার তাঁকে দেখা যায় সাদা কুর্তা এবং চুড়িদারের উপর ভি-গলা কালো জ্যাকেট। মাথায় রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী বাঁধনি প্রিন্টের কাপড়ের পাগড়ি। তাতে সোনালি হলুদ আর মেরুন রঙের আধিক্য থাকলেও, ছিল নীল, সবুজ, বেগুনি ও লাল রঙের ছোঁয়া৷
এখন প্রশ্ন হল বছর শেষে রাজস্থানে বিধানসভা ভোট৷ নভেম্বরে বা তার আগেই হয়তো নির্বাচন হয়ে যাবে মরুরাজ্যে৷ স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, রাজস্থানের মন পেতেই ১৫ অগাস্টের ভাষণে রাজস্থানি ঐতিহ্যবাহী কাপড়কে বেছে নিয়েছে মোদী। বিরোধীরা আরও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, গত ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসেও প্রধানমন্ত্রীর মাথায় ছিল রাজস্থানের বাঁধনি ছাপের কাপড়ের পাগড়ি।
মোদীর পোশাকের সঙ্গে ভোটব্যাঙ্কের সমীকরণ কষে বিরোধীরা বলছেন, ২০২২ সালে বিধানসভা ভোট ছিল হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। ওই বছর সাধারণতন্ত্র দিবসের বক্তৃতা দিতে মোদী এসেছিলেন হিমাচলি টুপি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ঐতিহ্যবাহী উড়নি গলায় জড়িয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত হিমাচলি টুপি ম্যাজিক দেখাতে পারেনি। হিমাচলের পাহাড়ি ঢালে ফোটেনি পদ্ম৷
কিন্তু সত্যিই কি ভোট দেখে পোশাক নির্বাচন করেন একদা গুজরাতের পোস্টার বয়? গত দশ বছরের স্বাধীনতা দিবসে কবে কোন পোশাক পরেছেন তিনি?
২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মোদী পরেছিলেন সাদার উপর গেরুয়া এবং সবুজ রঙের আঁচড় দেওয়া কাপড়ের পাগড়ি। গায়ে ছিল গাঢ় আকাশি বন্ধগলা এবং সাদা চুড়িদার কুর্তা।
২০২১ সালে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর ঘোষণা করেছিলেন গাঢ় আকাশি বন্ধগলা জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে৷ সঙ্গে ছিল সরু তাঁতের পাড়ের উড়নি। সেই বছর জাফরানি পাগড়িতে ছিল ক্রিম এবং গাঢ় বাদামি রঙের লেহরিয়া বাঁধনি ছাপ। এটাও কিন্তু রাজস্থানি স্টাইল। তবে ওই বছর রাজস্থান নয়, ভোট ছিল বাংলায়৷ সেখানেও হারতে হয় গেরুয়া শিবিরকে৷
২০২০ সালে মোদীর মাথায় ছিল গেরুয়া আর ক্রিম রঙের ডাই করা কাপড়ের পাগড়ি। এই ডাই করা কাপড়ও রাজস্থানের ঐতিহ্য।
২০১৯ সালের ১৫ অগাস্ট নমো উপস্থিত হয়েছিলেন লাল, হলুদ আর সবুজের লেহরিয়া কাপড়ের পাগড়িতে। এই ধরনের কাপড় মূলত মেলে রাজস্থানে। গুজরাতেও এই কাপড় তৈরির চল রয়েছে৷
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর মাথায় ছিল গাঢ় গেরুয়া এবং লাল রঙের পাগড়ি। উল্লেখ্য, সেটিও কিন্তু রাজস্থানি বাঁধনি কাপড়ের।
২০১৭ সালে মোদীর পাগড়ির রং ছিল উজ্জ্বল লাল-হলুদ৷ গায়ে ফিকে হলুদ রঙের হাফ হাতা মোদী কুর্তা৷ তার উপর রূপোলি সুতোর চৌখুপি। সেটিও রাজস্থান-গুজরাতের টাই অ্যান্ড ডাই কাপড়ের।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীকে দেখা গিয়েছিল হাফহাতা সাদা কুর্তা-পাজামার সঙ্গে গেরুয়া, হলুদ, লাল এবং গোলাপি রঙের ডাই করা পাগড়ি বাঁধতে৷
২০১৫ সালে ঘিয়ে রঙের কুর্তা এবং জ্যাকেটের সঙ্গে রং-বেরঙের রেখা টানা পাগড়িতে শিরসজ্জা করেছিলেন নমো৷
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লাল কেল্লায় প্রথমবার ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদী৷ সে বারও তাঁকে দেখা যায় রাজস্থানের যোধপুরী প্রিন্টের উজ্জ্বল লাল-সবুজ পাগড়িতে৷
ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভোট থাক বা না থাক, গত দশ বছরের মোদীর পাগড়ির কাপড়ে ধরা পড়েছে রাজস্থান বা গুজরাতি ঐতিহ্যের ছাপ৷ এবছরও তাঁর ব্যতিক্রম নয়৷