শিমলা: প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য হিমাচল প্রদেশের জুরি মেলা ভার। দেশ-বিদেশের নানা পর্যটক এই রাজ্যে আসেন সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজ্যে যা অবস্থা তাতে আশঙ্কিত হতে হয়। কোনও এক বিভীষিকাময় সময় যেন অতিক্রম করছে হিমাচল প্রদেশকে। ভেসে গিয়েছে একাধিক বাড়ি, রাস্তা ভেঙে অর্ধেক চলে গিয়েছে জলের তলায়, জায়গায় জায়গায় আটকে বহু পর্যটক, চারিদিকে হাহাকার, মৃত্যু। আসলে বৃষ্টি, বন্যা এবং ভূমিধসের কারণ কার্যত বিপর্যস্ত এই রাজ্য। ইতিমধ্যেই ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই দুর্যোগে। কেউ বাবাকে হারিয়েছেন, কেউ বন্ধুকে, কেউ মাকে… এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, একসঙ্গে এক পরিবারের তিন প্রজন্ম শেষ হয়ে গিয়েছে।
বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হিমাচল প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কার্যত ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছে। শিমলা থেকে শুরু করে মান্ডি জেলার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। ভেসে গিয়েছে বহু গ্রাম, চাষের জমি। পাশাপাশি একের পর এক ঘরবাড়ি, হোটেল তাসের ঘরের মতো ভেঙেছে। জল এবং খাদ্যাভাব দেখা গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। ৭০০-র বেশি রাস্তা ধসের কারণ বন্ধ হওয়ায় বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন। রাজ্যের একাধিক প্রান্ত থেকে মৃত্যুর খবর আসছে তা আতঙ্ক আরও বেশি বৃদ্ধি করছে জনমানসে। এখনও পর্যন্ত ভারী বর্ষণজনিত দুর্ঘটনায় হিমাচলে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মুহুর্মুহু ধস নেমেছে একাধিক জায়গায়। সেই ধসে চাপা পড়ে কেউ নিখোঁজ, কারও দেহ উদ্ধার হয়েছে। কেউ পরিজনদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
এমনই এক দুর্বিষহ ঘটনার ব্যাখ্যা করেছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি জানিয়েছেন, শিমলার সামার হিলের শিব বাওয়ারি মন্দিরে পুজো করতে এসে ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছে তাঁর পরিবারের তিন প্রজন্ম। কেউ যে বেঁচে নেই তা কার্যত নিশ্চিত। ব্যক্তি জানিয়েছেন, মন্দিরে পুজো করার সময় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মাটির নীচে ধসে যায় মন্দিরের একাংশ। ব্যক্তির কথায়, তাঁর ভাই স্ত্রী, পুত্র, নাতি, নাতনিদের নিয়ে মন্দিরে এসেছিল। আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁদের। পরিবারের পাঁচ সদস্যের দেহ উদ্ধার করা গেলেও এখনও দু’জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁরা যে এখনও বেঁচে আছেন, সেই আশা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু একটাই প্রার্থনা, দেহগুলি উদ্ধার করে যেন বাড়ি নিয়ে গিয়ে ভাল ভাবে শেষকৃত্য করতে পারেন।
বৃষ্টির জেরে হড়পা বান আর ধসের তাণ্ডব চলছে গোটা হিমাচল প্রদেশ জুড়ে। গত ১২ আগস্ট থেকে একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে লাগাতার। তাই রাজ্যের বহু জেলায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। অন্যদিকে হিমাচলের চাম্বা, কাংড়া, হমিরপুর, মান্ডি, বিলাসপুর, সোলান, শিমলার বিচ্ছিন্ন জায়গা ভারী বৃষ্টির জেরে এখনও বিপর্যস্ত। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ২৯টি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি দল ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। এছাড়া পুলিশ, সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা এবং স্থানীয় প্রশাসনও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।