‘শিব শক্তি’ পয়েন্ট বনাম ‘জওহর পয়েন্ট’, নাম তরজায় বিজেপি-কংগ্রেস

‘শিব শক্তি’ পয়েন্ট বনাম ‘জওহর পয়েন্ট’, নাম তরজায় বিজেপি-কংগ্রেস

shiv shakti

বেঙ্গালুরু:  চন্দ্রজয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয় ভারতের নাম৷ গত বুধবার সন্ধ্যায় চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ড করে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার৷ ‘বিক্রম’ চাঁদের মাটি ছুতেই দেশজুড়ে শুরু হয় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস৷ কিন্তু ওই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন বিদেশে৷ সেখান থেকেই মহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী থাকেন নমো৷ শনিবার দেশে পা রেখেই সোজা পৌঁছে যান ইসরোর দফতরে৷ সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেন, তৃতীয় চন্দ্রযানের অবতরণস্থলের নাম এখন থেকে হবে ‘শিবশক্তি’।অন্যদিকে, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ চাঁদের যে জায়গায় ভেঙে পড়েছিল, শনিবার সেই স্থানটিরও নামকরণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ওই স্থানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘তেরঙা’।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী এই নামকরণ করতেই তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়ায় কংগ্রেস ও বিজেপি৷ নতুন করে শুরু হয় যুযুধান দুই শিবিরের তরজা৷ ‘শিবশক্তি’ বনাম ‘জহর পয়েন্ট’-এর লড়াইয়ে কংগ্রেসের তোপ ‘মোদী চাঁদের মালিক নন’৷ পাল্টা বিজেপি কংগ্রেসকে দাগালেন, ‘ওরা হিন্দু-বিরোধী’ বলে৷ নামকরণ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভির বক্তব্য, এটি হাস্যকর৷ টেলিভিশনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্ব এবার হাসবে৷ কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নামকরণ করার অধিকার দিল? আমরা চাঁদে অবতরণ করেছি, এটা আনন্দের৷ নিঃসন্দেহে আমরা গর্বিত৷ তবে আমরা কেউই চাঁদ বা চাঁদের কোনও অংশের মালিক নই৷’’

কংগ্রেসের এই মন্তব্যে রণংদেহি বিজেপি৷ কংগ্রেসকে সরাসরি ‘হিন্দু-বিরোধী’ বলে তোপ দাগলেন দলের জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা৷ তিনি বলেন, ‘এটা সেই দল যারা ভগবান শ্রীরামের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে, রাম মন্দিরের বিরোধিতা করে এবং হিন্দুদের গালমন্দ করে৷’’ তাঁর আরও সংযোজন, শিবশক্তি পয়েন্ট এবং তেরঙ্গা পয়েন্ট-দুটোই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত৷ রশিদ আলভি এর মধ্যে হাস্যকর কী দেখলেন? আসলে, কংগ্রেসের কাছে পরিবারবাদই আগে৷ তারা শুধু গান্ধী পরিবার আর জওহরলাল নেহরুর প্রশংসা করতে জানে৷ বলে রাখি, বিক্রম ল্যান্ডারের নামকরণ হয়েছে বিক্রম সরাভাইয়ের নামে৷’’ 

কংগ্রেসকে একহাত নিয়ে পুনাওয়ালা আরও বলেন, এটা ইউপিএ সরকার হলে, কখনই চন্দ্রযান-২ এবং চন্দ্রযান-৩-কে পাঠাত না৷ আর যদি কোনও ভাবে চাঁদে মহাকাশযান পাঠাতও, তবে তার নাম দিত ইন্দিরা পয়েন্ট কিংবা রাজীব পয়েন্ট৷’’  

ইসরোর প্রথম চন্দ্রাভিযান তথা চন্দ্রযান ১-র ‘ইমপ্যাক্ট প্রব’-এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘জওহর পয়েন্ট’। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, চাঁদের শ্যাকলটন ক্রেটারের নিকটবর্তী অঞ্চলের নাম ‘জওহর পয়েন্ট’ দিয়েছিল ভারত। এই অংশেই ইসরোর মুন ইমপ্যাক্ট প্রোব ক্র্যাশ ল্যান্ড করেছিল৷ কাকতালীয় ভাবে দিনটি ছিল ১৪ নভেম্বর৷ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন৷ সেই ‘ইমপ্যাক্ট সাইট’-এর নাম দেওয়া হয় ‘জওহর পয়েন্ট’বা ‘জওহর স্থল’। চাঁদের মাটিতে ‘ইমপ্যাক্ট প্রব’-কে চিহ্নিত করতেই ছিল এই নামকরণ৷ 

২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সফল উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-১৷ ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, সুইডেন এবং বুলগেরিয়ায় তৈরি ১১টি বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত এই মহাকাশযান চাঁদের রাসায়নিক গঠন এবং খনিজ অধ্যায়নের জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করেছিল। ১৪ নভেম্বর চন্দ্রযান-১ চাঁদের মাটি ছোয়৷ পরিকল্পিত ভাবেই দক্ষিণ মেরুর কাছে ভেঙে পড়ে এটি৷ সেই স্থানের নাম দেওয়া হয় জওহর স্থল বা জওহর পয়েন্ট৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =