কলকাতা: যাঁরা মনে করেন, নতুন বছর মানেই নতুন কিছু করে দেখাতে হবে, অর্থনীতি ঠিক তাঁদের পথের পথিক নয়৷ বলতে গেলে, অর্থনীতির নতুন বছর শুরু হয় পয়লা এপ্রিল থেকে৷ আর বাজেট হল সেই বছরের সবচয়ে বড় উৎসব৷ এমতাবস্থায়, শতাংশের বিচারে পঁয়তাল্লিশ বছরে দেশের সর্বোচ্ছ বেকারির সাক্ষী থাকা ডিজিটাল ইন্ডিয়া, নতুন বছরে নতুন করে কর্মসংস্থান জোগাতে পারবে কিনা, তা সত্যিই লাখটাকার প্রশ্ন৷
প্রথমেই বুঝে নেওয়া যাক একটি দেশে কর্মসংস্থান হয় কীভাবে? হয় সরকারি ক্ষেত্রে ব্যাপক নিয়োগ, নয়তো প্রচুর পরিমাণে বেসরকারি বিনিয়োগ৷ সরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের আশা নতুন বছরে কিছুটা যে নেই, তা কিন্তু নয়৷ যদিও প্রশ্ন হল, সামগ্রিক কর্মসংস্থানের প্রশ্নে তার ভূমিকা কতখানি? ওই নামমাত্র নিয়োগে দেশের অতিকায় বেকারির ভুখা পেট যে আদৌ ভরবে না, তা নিয়ে সংশয়ের কোনও অবকাশই নেই৷
এই পরিস্থিতিতে একমাত্র ভরসা বেসরকারি বিনিয়োগ৷ কিন্তু গত একবছরে সেই বিনিয়োগে যা ভাঁটার টান দেখা দিয়েছে, কোনও ম্যাজিক কাঠি ছুঁইয়ে আপাতত তাকে চাঙ্গা করার যাবে বলে মনে করেন না অর্থনীতিবিদরা৷ কারণ, বাজারে চাহিদা তৈরি হলে তবেই বিনিয়োগের প্রশ্ন আসে৷ কিন্তু নতুন গাড়ি থেকে নতুন বাড়ি, চাহিদার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না. গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবধি যা পরিস্থিতি ছিল, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতেই আগ্রহী হননি ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা৷ বছরের শেষে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতির আশু উন্নতির কোনও সম্ভাবনাই নেই৷
এমনিতেই মোদি জামানায় বেকারত্ব ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হার ছুয়েছে৷ আর্থিক বৃদ্ধির হার গত ন-বছরে এমন তলানিতে ঠেকেনি কখনও৷ এমতাবস্থায় ঝিমিয়ে পড়া বাজারকে চাঙ্গা করার কোনও জাদুকাঠি কাউর হাতেই নেই বলে মনে করা হচ্ছে৷ ২০১৯ সালে বৃদ্ধির হার এমনই তলানিতে ঠেকেছে যে তাকে ছয় দশক আগে নেহেরু জমানার ঢিমেতেতালায় চলা 'হিন্দু রেট অব গ্রোথে'র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে৷ এমতাবস্থায় গাড়ি শিল্প থেকে নিত্যদিন ছাঁটাইয়ের খবর আসতে থেকেছে৷ জামদেশপুর-আদিত্যপুর এলাকায় লাগাতার চলেছে কাজ-ছাঁটাই, লে-অফ৷ স্থায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে ঠিকা শ্রমিকের পেটে লাঠি মারা হয়েছে৷ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নতুন প্রজন্ম অ্যাপক্যাব বেশি পছন্দ করায় গাড়ি কেনার তাগিদ অনুভব করছে না৷ রবিশঙ্কর প্রসাদ সিনেমার টিকিট বিক্রির পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, অর্থনীতি দিব্যি চলছে৷
অন্যদিকে রিয়েলএস্টেটেও সুরাহার কোনও খবর পাওয়া যায়নি৷ যদিও দিন-কে-দিন ঝিমিয়ে পড়া রিয়েলএস্টেটকে চাঙ্গা করতে কার্যত ত্রাণ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন৷ কিন্তু কাজের কাজ খুব একটা হয়নি৷ ঝিমিয়ে পড়া বাজারকে চাঙ্গা করতে বিপুল পরিমাণে কর্পোরেট করছাড় দেওয়া হয়েছে৷ তাতেও বাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি৷
আর আজ, নতুন বছর তথা নতুন দশকের দোরগোড়ায় এসে আমরা দেখছি, বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করছে মার্কিন সংস্থা৷ সামান্য যা কিছু কাজ পড়ে রয়েছে, সব যন্ত্রে গ্রাস করছে৷ কৃত্রিম মেধার সৌজন্যে দেশে লাখলাখ পদ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে, নতুন কর্মসংস্থান তো দূরঅস্ত, ছাঁটাইয়ের পরিমাণ কমলেই লোকে এখন বলতে বাধ্য হবে, দিব্যি চলছে আমাদের অর্থনীতি৷