কলকাতা: চাকরিপ্রার্থীদের হতাশ করে ফের পিছিয়ে গেল উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ মামলার ভবিষ্যৎ৷ আজ কলকাতা হাইকোর্টে উচ্চ প্রাথমিকের মেধাতালিকা সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল৷ কিন্তু সময়ের অভাবে সেই মামলা আজ শুনানি পর্যন্ত গড়াতে পারেনি৷
আদালত সূত্রে খবর, আজ কলকাতা হাইকোর্টের ৩৯ নম্বর কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু আদালতের সময়ের অভাবে শেষ পর্যন্ত মামলাটির শুনানি সম্ভব হয়নি৷ আজ শুনানি না হওয়ার ফের আগামী সপ্তাহে এই মামলা শুনানি হতে পারে বলে আদালত সূত্রে খবর৷
একদিকে উচ্চ প্রাথমিকে মামলার জট, অন্যদিকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে শূন্যতা৷ সব মিলিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের বড় অংশ৷ মেধা তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর লাগামছাড়া অনিয়মের জেরে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে এমনিতেই ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷ মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে কম সমালোচনা করেনি কলকাতা হাইকোর্ট৷ কমিশনের তরফেও যথাযথ যুক্তি খাঁড়া করার চেষ্টা করা হলেও তা বারংবার ব্যর্থ হয়েছে৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত মামলার সুষ্ঠু সমাধান আসেনি৷ আর সেই কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ মামলা৷ আর মামলা ঝুলে থাকার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বেশ খানিকটা স্তিমিত হয়ে রয়েছে বলে স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে খবর৷
২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট৷ গোটা রাজ্যবাপী টেট পরীক্ষা হয়েছিল শিক্ষক নিয়োগের জন্য৷ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার আশায় কয়েক লক্ষ বেকার চাকরিপ্রার্থী এই পরীক্ষায় বসে ছিলেন৷ সেখানে প্রশিক্ষিত চাকরি প্রার্থী হিসেবে ১ লক্ষ ২০ হাজার ও অপ্রশিক্ষিত চাকরি প্রার্থী হিসেবে ২ লক্ষ ২৮ হাজার প্রার্থী, সব মিলিয়ে অন্তত ২ লক্ষ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন৷ সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল৷ কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না দেখে রাস্তায় নেমেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ চাকরিপ্রার্থীদের লাগাতার আন্দোলন, রাতভর ধর্না, বিক্ষোভ, পুলিশের মার, গ্রেপ্তারি শেষে সফল চাকরিপ্রার্থীদের নথি যাচাইয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বাধ্য হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ দীর্ঘ আন্দোলনের পর উচ্চ প্রাথমিকে তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই ঘটে যায় বিপত্তি৷ দায়ের হয় মামলা৷
ছন্দ পতন ঘটে, প্রশিক্ষিত পরীক্ষার্থীদের না ডেকে অপ্রক্ষিতদের স্কুল সার্ভিস কমিশন ডাকে যখন৷ প্রথমে ভেরিফিকেশন পর্বের পর ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বারবার আইনি জটিলতা আসে এই টেট পরীক্ষা ঘিরে৷ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন প্রায় ৫০০ কাছাকাছি প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী৷ পরে, বেশ কয়েকটি পর্বে মামলাকারীদের চাকরিপ্রার্থীদের নথি যাচাইয়ের সুযোগ দেওয়া হয়৷ গতবছর ২০১৯ সালে ৪ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে৷ সেখানে সিরিয়াল নম্বর উল্লেখ করে প্রার্থীদের নাম, তাঁদের রোল নম্বার, অ্যাক্যাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন, টেট ও পার্সোনালিটি টেস্ট৷ সেখানে প্রার্থীর মোট নম্বর উল্লেখ করা হয়৷ কোন প্রার্থী কত নম্বর পেয়েছেন তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেওয়া হয়েছে৷ সেখানেও ওঠে গুচ্ছ অনিয়ম৷ মেধাতালিকা বাতিলের দাবিতে দায়ের হয় মামলা৷ সেই মামলা আজও চলছে৷