স্কুল শিক্ষকদের জন্য সুখবর, নয়া অনুমোদন রাজ্য মন্ত্রিসভার

স্কুল শিক্ষকদের জন্য সুখবর, নয়া অনুমোদন রাজ্য মন্ত্রিসভার

কলকাতা: সরস্বতী পুজোর আগের স্কুল শিক্ষকদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সুখবর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার সেই আগাম সুখবরকে কার্যত বাস্তব করার পথে হাঁটল রাজ্য মন্ত্রিসভা৷ স্কুল শিক্ষকদের জন্য আজ রাজমন্ত্রিসভায় বেশ কিছু গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ 

জানা গিয়েছে, নতুন নিয়োগ ও কর্মরত শিক্ষকদের এখন থেকে আর দূর জেলায় বদলি হতে হবে না৷ নিজের জেলার বাইরে চাকরি করতে যেতে হবে না স্কুল শিক্ষকদের৷ নিজের জেলায় স্কুলে শিক্ষকরা পাবেন পড়ানোর সুযোগ৷ আজ এই মর্মে সিলমোহর দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা৷

এর আগে টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘‘আমরা আমাদের শিক্ষক ও আমাদের ছাত্রদের জন্য গর্বিত৷ শিক্ষকরা হলেন প্রধান অভিভাবক৷ আমাদের আগামীকালকে সত্যিকারের নেতা হওয়ার জন্য আমাদের ছাত্রদের লালন-পালনের মাধ্যমে সমাজ এবং জাতি গঠনে তাঁদের বিশাল অবদান রয়েছে৷’’ দ্বিতীয় টুইটে শিক্ষক বদলির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘সরস্বতী পুজার প্রাক্কালে, আমাদের সকল শিক্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা৷ আমরা শিক্ষকদের নিজের জেলায় পোস্ট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর তৃতীয় টুইটে লেখেন, ‘‘এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি তাঁদের নিজের পরিবারের প্রতি যত্নবান হতে পারবেন৷ সমাজ গঠনের কাজে অবদান রাখার জন্য বেশি সময় দিতে পারবেন৷ শান্ত ও মনোযোগ নিয়ে কাজ করতে সহায়তা করবে এই সিদ্ধান্ত৷ সকলকে আমার শুভেচ্ছা!’’

যদিও, এর আগে গতবছর ৩০ মে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা পারস্পরিক বদলি ও ট্রান্সফার অন স্পেশ্যাল গ্রাউন্ডে বদলির প্রক্রিয়া শুরু করার বিজ্ঞপ্তি দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ মিউচুয়াল ট্রান্সফারের জন্য আবেদন গ্রহণের পর গত ৬ ডিসেম্বর কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত নতুন স্কুলে যোগ দিতে পারেননি স্কুল শিক্ষকদের বড়অংশ৷ পরে চলতি মাসে কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই প্রক্রিয়া আরও একমাস বৃদ্ধি করার ঘোষণা করে৷ এবার নতুন বছরে মুখ্যমন্ত্রীর নয়া বদলি নীতি ঘোষণা ও মন্ত্রিসভার অনুমোদন ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে চর্চ৷ 

স্কুল শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রীর টুইট বার্তার পর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড়সড় বদল আসছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছিল আজ বিকেল ডট কম৷ এবার সেই ইঙ্গিত আরও খানিকটা খোলসা করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সরস্বতী পুজোর দিনে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন বেশ কিছু নিয়ম লাগু হবে৷ বদলে যাবে চলতি ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া৷ একই সঙ্গে স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পার্থ৷ 

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ জানান, নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বাড়ির কাছে স্কুল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে৷ শিক্ষা দপ্তরও এ বিষয়ে প্রশাসনিক কাজ শুরু করে দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ এবিষয়ে বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে আলোচনার করে বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথাও জানিয়েছেন পার্থ৷ একই সঙ্গে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের কতজন শিক্ষক রয়েছেন তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে৷ একই সঙ্গে শূন্যপদের সংখ্যাও চাওয়া হয়েছে৷ 

শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, নতুন প্রজন্মের শিক্ষক নিযোগের জন্য সময়মতো নিয়োগ করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ স্বচ্ছতার আনা হবে৷ শিক্ষকরা যাতে বাড়ির কাছে কেন স্কুলে সুযোগ পান, তার ব্যবস্থা করা হবে৷ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় বদল করা হবে৷ পার্থবাবু বলেন, আমরা বরাবর বলে আসছিলাম চলতি আইন অনুযায়ী বিশেষ করে শিক্ষিকাদের যতটা সম্ভব কাছাকাছি বদলি করার চেষ্টা করেছি৷  যাতায়াতেই যদি সব সময় চলে যায়, তাহলে তাঁরা কী পড়াবেন? সংসার হলে সেখানেও সময় দিতে হয়৷ দূরে কর্মক্ষেত্রে হওয়ায় সেটা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই নিয়ম-নীতিই পাল্টে ফেলা হচ্ছে৷ পরবর্তী নিয়োগও সেই নিয়মে হবে৷ 

শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, ‌কমিশনারকে বলেছি জেলাভিত্তিক স্কুল ও পড়ুয়ার হিসেব নিতে৷ এই সিদ্ধান্ত রূপায়ণের জন্য বদলি নীতি ও বিধিতেও সংশোধনী আনা হবে৷ শূন্যপদ পূরণ হহবে নয়া পদ্ধতি মেনে হবে৷ এই নীতি কার্যকর করতে এসএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বদল আনা হয়েছে৷ নিয়োগের আগে কে কোন স্কুলে, কোন জেলায় যাবে ইত্যাদি প্রশ্ন করার সুযোগ আর থাকছে না৷ এরপরের নিয়োগ নতুন বিধি মেনে হবে৷

নতুন নিয়ম লাঘু করে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ চলতি নিয়োগ যেমন চলছে তেমন চলবে৷ তবে চলতি ব্যবস্থায় নতুন করে আর শিক্ষক নিয়োগ করা হবে না৷ নিয়োগের স্বচ্ছতা আনতে নয়া বিধি আগামীতে কার্যকর হবে বলে সাফ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ ঠিক কী কী পরিবর্তন আনতে পারে রাজ্য?  জানা গিয়েছে, লিখিত পরীক্ষার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন৷ তবে, চলতি নিয়মে নতুন করে কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা না হলেও চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলি চলবে৷ নতুন বিধি অনুযায়ী প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে নিয়মে বদল করা হবে৷ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নতুন বিধি কার্যকর করে নতুন করে  টেট বা এসএলএসটি বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে৷ 

লাগাতার মামলা, নিয়োগ ঘিরে অসঙ্গতির অভিযোগের জেরে শিক্ষক নিয়োগে নতুন পদ্ধতি আনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ গতবছর অক্টোবরে একটি সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘নতুন করে আর হবে না শিক্ষক নিয়োগ৷ নতুন নিয়ম চালু করে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা হবে৷ চলতি নিয়োগ যেমন চলছে তেমন চলবে৷ তবে বর্তমান নিয়োগের যে ব্যবস্থা চালু আছে তা আর আগামীতে কার্যকর হবে না৷ কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ ত্বরান্বিত করা যায় সেটা আমরা দেখছি৷ আরও বেশি স্বচ্ছতা আনতে আমরা পদ্ধতি পরিবর্তন করছি৷ কাউন্সেলিংয়ের জটি পদ্ধতির জেরে অনেক সমস্যা, সময় লেগে যাচ্ছে৷ এই সমস্যা মেটাতে লিখিত পরীক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে৷ একটি কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷’’

গত বাজেট অধিবেশনে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী নিজে ঘোষণা করেছিলেন, শিক্ষক নিয়োগে যেভাবে আইনি জটিলতা বাড়ছে, এই নিয়ে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হতে পারে৷ আরও সরলীকরণ করা হতে পারে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওয়েটিং লিস্ট তুলে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *