শিশুকে বুকে আগলে বেতন বঞ্চনার লড়াই শিক্ষিকার! বিকাশ ভবনে শিক্ষক বিদ্রোহ

শিশুকে বুকে আগলে বেতন বঞ্চনার লড়াই শিক্ষিকার! বিকাশ ভবনে শিক্ষক বিদ্রোহ

কলকাতা: ক্ষোভ আগেই ছিল৷ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে ছিল বেতন বঞ্চনার যন্ত্রণা৷ বঞ্চনা ঘোচাতে ধর্না, মিছিল, মিটিং, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেও মেলেনি সমাধান৷ উল্টে বর্ধিত বেতনেও বঞ্চনা আরও তীব্র হয়েছে৷ প্রাথমিক শিক্ষক, পার্শ্ব শিক্ষক, বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের ধর্না কর্মসূচির পর আদালতের অনুমতি নিয়ে এবার বিকাশ ভবনের অদূরে রাজপথে ধর্নায় বসলেন রাজ্যের কয়ের হাজার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক৷ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশিক্ষিত ও স্নাতক শিক্ষকদের বেতনক্রম অনুযায়ী বেতনের দাবিতে এই নিয়ে দু’দিন ধর্নায় রয়েছেন শিক্ষকরা৷ কোলের শিশুকে নিয়ে ধর্না মঞ্চে হাজির মা শিক্ষিকাও৷ নিজেদের দাবি আদায়ে টানা এক সপ্তাহ ধর্না কর্মসূচি গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের৷

বিকাশ ভবনের সামনে ধর্না বিক্ষোভের কর্মসূচি জন্য রাজ্য প্রশাসনের তরফে অনুমতি না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের সংগঠন গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন৷ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এলজাসে মামলার নিষ্পত্তি ঘটে৷ শিক্ষকদের কর্মসূচিতে অনুমোদন দেয় আদালত৷ কলকাতা হাইকোর্টের তরফে অনুমতি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিকাশ ভবনের সামনে ধর্না কর্মসূচিতে বসেছেন শিক্ষকরা৷ সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিকাশ ভবনে ধর্না কর্মসূচি আজ দ্বিতীয় দিনে পড়েছে৷ শিক্ষকদের এই কর্মসূচির পাশে দাঁড়িয়েছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন৷

শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘পাশ গ্রাজুয়েট শিক্ষকরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত৷ গত সরকারের আমলেও শিক্ষকদের এ বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি বারবার দাবি তুললেও তারা কর্ণপাত করেনি৷ বর্তমানে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের টি জি টি স্কেলের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে (গ্রেড পে ৪৬০০ টাকা) তাকে সমিতি পূর্ণ সমর্থন করে৷ সাথে সাথে ২০১৬ সালের আগে নিযুক্ত সমস্ত অনার্স গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের উদ্ভুত সমস্যারও সমাধান দাবি করছি আমরা৷ আদলতের অর্ডার দেওয়া সত্ত্বেও গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের সর্বভারতীয় স্কেল চালু করছে না৷ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক৷ আমরা অবিলম্বে তাঁদের বঞ্চনা নিরসনে সম্মানজনক টি জি টি স্কেল চালুর দাবি জানাচ্ছি৷’’

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সমর্থন৷

বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনে তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশিক্ষিত ও স্নাতক শিক্ষকদের যে বেতনক্রম দেওয়ার বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা এখন কার্যকর করা হয়নি৷ কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট স্কিম কার্যকর করার দাবি দীর্ঘ দিন ধরে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলেও তা মান্যতা পায়নি৷ কেন এই আন্দোলন? এর কারণ হিসেবে শিক্ষক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী টিজিটি ও পিজিটি ক্যাটাগরির শিক্ষকদের ব্যাসিক পে’র মধ্যে পার্থক্য থাকার কথা ২৭০০ টাকা৷ কিন্ত বর্তমানে এই রাজ্যে সেই পার্থক্য কয়েক গুন বেড়ে গিয়েছে৷ শিক্ষক সংগঠনের দাবি, রাজ্য সরকার গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের পাস ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে রাখায় এই পার্থক্য বেড়েই চলেছে৷ গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের টিজিটি স্কেল না মিটিয়ে ষষ্ঠ পে কমিশন কার্যকর হওয়ায় সেই পার্থক্য আরও বেড়েছে৷ এই বেতন বঞ্চনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের মামলা দায়ের ও রায় ঘোষণার পরও সমস্যা সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের৷ হাইকোর্টের তরফে টিজিটি স্কেল মেটানোর নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্য সরকার হাইকোর্টের রায় মেনে গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য মেটাচ্ছে না বলেও অভিযোগ শিক্ষক সংগঠনের৷ আর তার জেরেই ফের বিদ্রোহ শিক্ষকদের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − two =