maoist activities
নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ অব্যাহত। মাঝেমধ্যেই মাওবাদী আক্রমণের নিশানা হন পুলিশ ও আধা সেনা জওয়ানরা। আর সেই চরম বামপন্থা বা নকশালপন্থীদের কার্যকলাপ উন্নয়নের জন্য বড় বাধা বলে মনে করে কেন্দ্র। এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জোরের সঙ্গে দাবি করলেন আগামী দু’বছরের মধ্যেই জঙ্গি নকশালপন্থাকে দেশ থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব হবে। শুক্রবার এনআইএ আয়োজিত দিল্লিতে ‘জঙ্গি নকশালপন্থী পর্যালোচনা’ (অ্যান্টি টেরর কনফারেন্স) সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন শাহ। সেখানেই এমন দাবি করেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,”গত চার দশকের মধ্যে গত বছর বিভিন্ন রাজ্যের মাওবাদী উপদ্রুত এলাকাগুলিতে সবচেয়ে কম হিংসা এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করছি আগামী দু’বছরের মধ্যেই দেশ থেকে পুরোপুরি সেটিকে উপড়ে ফেলা যাবে”। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মাওবাদী হামলা ৭৭ শতাংশ কমেছে। ঘটনা হল ২০১৫ সালে জঙ্গি নকশাল পন্থা দমনে ‘জাতীয় পর্যায়ের নীতি’ গ্রহণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সুফল এবার মিলছে বলেই দাবি করেছেন শাহ। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলি থেকে অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগ আসে। তাতে থমকে যায় উন্নয়ন। তাই সেই সমস্ত প্রত্যন্ত এলাকায় নতুন করে মাওবাদী কার্যকলাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন শাহ। সেই সূত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে ঠিক হয় নকশালবাদী কার্যকলাপকে বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করে রোডম্যাপ তৈরি করবে। আর সেই লক্ষ্যে অতীতে যে পদক্ষেপগুলি করা হয়েছে সেগুলি এখন ঠিক কি অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য খালিস্তানি জঙ্গিদের কার্যকলাপ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিদেশি শক্তির মদতে খালিস্তানিরা ফের দেশে পরিস্থিতি অস্থির করে তুলতে চাইছে বলে নয়াদিল্লি নিশ্চিত। এই আবহের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বৈঠকে যোগ দিয়ে যে দাবি করেছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, বৈঠকে খালিস্তানি জঙ্গি দমনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জানা গিয়েছে বৈঠকে অমিত শাহ বলেছেন,”সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে একজোট হয়ে এগোতে হবে। অস্থিরতা বন্ধ করার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যস্তরে একটাই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুসরণ করতে হবে। তাহলেই সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ করে শান্তি বজায় রাখা যাবে দেশে।”
অতীতে বিভিন্ন রাজ্যে মাওবাদী হানায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন আধা সামরিক বাহিনীর বহু জওয়ান ও পুলিশকর্মী। মৃত্যু হয়েছে বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের। অন্যদিকে নিরাপত্তারক্ষীদের এনকাউন্টারে নিকেশ হয়েছে বহু মাওবাদী ও তাদের শীর্ষ নেতারা। ঘটনা হল ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর মাওবাদী দমনকে অন্যতম অগ্রাধিকার দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। আর সেই সূত্রেই মাওবাদী কার্যকলাপ অনেকটাই কমানো গিয়েছে।
কিন্তু এই কার্যকলাপ পুরোপুরি নির্মূল করা কি সম্ভব হবে? কাজটা নিঃসন্দেহে বেশ কঠিন। কারণ মাওবাদীরা প্রত্যন্ত গ্রামে ঢুকে সেখানকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে তাঁদের সাহায্য নিয়ে লুকিয়ে থাকে বলে শোনা যায়। মূলত যে সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন সেভাবে হয় না সেখানকার মানুষকে নানাভাবে বুঝিয়ে তাঁদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা করে মাওবাদীরা। বহু জায়গায় গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। তাই মাওবাদীরা কোথায় লুকিয়ে আছে সেই খোঁজ পেতে সমস্যায় পড়েন নিরাপত্তারক্ষীরা। যদিও বর্তমানে মাওবাদী কার্যকলাপ অনেকটাই কমেছে। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ করতে গেলে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য পাওয়া যে প্রয়োজন সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছেন তা আগামী দিনে কতটা বাস্তবায়িত হয় সেটাই দেখার বিষয়।