ভারতীয় রেলে ১.৫ লক্ষ শূন্যপদে নিয়োগ কবে? বিদ্রোহ এবার চাকরি প্রার্থীদের

অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, নন গেজেটেড নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা নেবে কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি । রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের এনটিপিসি এবং গ্রুপ ডি নিয়োগের পরীক্ষাও এর আওতায় আসবে। তাই এজেন্সি গঠন না হওয়া পর্যন্ত রেলের পরীক্ষার দিন ঘোষণা কার্যত অসম্ভব। বিক্ষোভের পথে হাঁটছেন পরীক্ষার্থীরা।

কলকাতা:  ভোটের আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে জারি হয়েছিল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের এনটিপিসি-র প্রথম পর্যায়ের কম্পিউটার ভিত্তিক টেস্ট পরীক্ষা আরও কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা আগেই প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। তবে জানুয়ারিতেই পরীক্ষার দিন ঘোষণা হবে এবং সেই অনুযায়ী পরীক্ষা হবে ফেব্রুয়ারিতেই এমনটাই দাবি করা হয়েছিল রেল সূত্রে। এখন জানা যাচ্ছে যে পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব কোন সংস্থাকে দেওয়া হবে সেটাই স্থির করে উঠতে পারেনি রেল। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি কোথায় কিভাবে দেওয়া হবে বা পরীক্ষা কোন তারিখে নেওয়া হবে কোনোকিছুই সময়মতো হয়ে উঠছেনা। ফলত দিনের পর দিন পিছিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার সময়। এই পরিস্থিতিতে আবারও বিক্ষোভে সামিল হতে চলেছেন রেলের পরীক্ষার্থীরা। আগামী ২৫শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের বীপরীতে রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সামনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
 

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে রেল সবসময়ই নিয়োগের একটা বড় ভরসা। গতবছর লোকসভা ভোটের মুখে রেলে বড়সড়  নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। চারটি ক্ষেত্র মিলিয়ে লক্ষাধিক শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল । এরমধ্যে সব থেকে বেশি শূন্যপদ ছিল গ্রুপ ডি বা লেবেল ওয়ান-এ, মোট ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৬৯টি শূন্যপদ। এছাড়াও রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড নন টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটাগরি (এনটিপিসি) -র জন্য শূন্যপদ ছিল ৩৫,২০৮টি। এই পদগুলিতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি। দুটি বিভাগ মিলিয়ে মোট ৩৫ হাজার ২৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের কথা জানানো হয়। এরমধ্যে ১০ হাজার ৬২৮টি শূন্যপদে নিয়োগের কথা জানানো হয়েছিল যাদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ। 

এছাড়াও  জুনিয়র ক্লার্ক এবং টাইপিস্ট, অ্যাউন্টস ক্লার্ক, জুনিয়র টাইম কিপার, ট্রেন ক্লার্ক এবং কমার্শিয়াল ও টিকিট ক্লার্ক পদে আবেদনের  কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল যেখানে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে স্নাতক বা সমতুল। এরমধ্যে ট্র্যাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট, গুডস গার্ড, সিনিয়র কমার্শিয়াল এবং টিকিট ক্লার্ক, সিনিয়র ক্লার্ক, জুনিয়র অ্যাকাউন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, সিনিয়র টাইম কিপার, কমার্শিয়াল অ্যাপ্রেন্টিস এবং স্টেশন মাস্টার পদ ছিল। এই ক্ষেত্রে শূন্যপদ ছিল ২৪ হাজার ৬৪৯টি। একইসঙ্গে প্যারামেডিক্যাল ক্ষেত্রেও ১৯৩৭টি শূন্যপদে এবং রেলওয়ে মন্ত্রক এবং আইসোলেটেড ক্ষেত্রের ১৬৬৫টি পদের জন্যও নিয়োগের ঘোষনা করেছিল রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড। এরমধ্যে থেকে পরবর্তী কালে বেশকিছু  পদ প্রত্যাহারও করা হয়। তবে সব মিলিয়ে গত বছর রেলে প্রায় দেড় লক্ষ নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। 

এছাড়াও গত বছরে যে চারটি ক্ষেত্রে নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল তারমধ্যে রেলের প্যারামেডিক্যাল ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষা বা সিবিটি হয়েছে গত জুলাই মাসে। নথি পরীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে কিন্তু তারপর নিয়োগের প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। মিনিস্টিরিয়াল আইসোলেটেড ক্যাটেগরির ক্ষেত্রে রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড পরীক্ষার কোনও দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। গত বছর জুন মাসে এই পরীক্ষার 

সিলেবাসও ওয়েবসাইটে দিয়েছিল বোর্ড। তবে সেই পর্যন্তই । এদিকে সবথেকে বেশি প্রার্থী নিয়োগ হওয়ার কথা গ্রুপ ডি এবং এনটিপিসি’র ক্ষেত্রে। যেখানে দুকোটিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে,  গ্রুপ ডি বা লেবেল ওয়ান পদের ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৬৯টি শূন্যপদের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৬৭ হাজার ২৪৮টি। আরআরবি-এনটিপিসি’র ৩৫ হাজার ২৭৭টি শূন্যপদের জন্য ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৮৫ জন ফরম পূরণ হয়েছে।  অর্থাৎ সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি আবেদন জমা পড়েছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই নিয়োগের জন্য পরীক্ষা হবে বলে জানানো হয়েছিল। তিনটি ধাপে, প্রথমে কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষা বা সিবিটি, এরপর শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা এবং সবশেষে নথিপত্র যাচাই ও মেডিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা হওয়ার কথা। বিজ্ঞপ্তি জারির পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। 

অন্যদিকে, এবছর বাজেটে অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, সরকার ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি বা এনআরএ গঠন করবে। যা নন গেজেটেড নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা নেবে। রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের এনটিপিসি এবং গ্রুপ ডি নিয়োগের পরীক্ষাও এর আওতায় আসবে। এক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের মনে আশঙ্কা বেড়েছে। কারণ ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি এখনও তৈরিই হয়নি। তাই পরীক্ষার প্রশ্নই উঠছেনা।  নিয়োগের আবেদনপত্র পূরণের ক্ষেত্রে ফি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ফরমের জন্য একশো টাকা লাগত সেখানে ২৫০ বা ৫০০টাকা নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ফর্ম এবং পরীক্ষার ফি বাবদ একটা বিশাল অংকের টাকা একটা বিশাল অঙ্কের টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এসেছে। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঘাটতি মেটাতেই সরকার এই হাজার কোটি টাকা জমা রেখে সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে বলেও অভিযোগ উঠছে। সবমিলিয়ে রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের বিরুদ্ধে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে দেশজুড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *