চাকরি বাঁচাতে শারীরিক পরীক্ষা, তবুও নাকাল বহু শিক্ষক, বাড়ছে ক্ষোভ

চাকরি বাঁচাতে শারীরিক পরীক্ষা, তবুও নাকাল বহু শিক্ষক, বাড়ছে ক্ষোভ

কলকাতা:  চাকরি তো মিলেছে৷ কিন্তু চাকরি পাকা করতে হলে স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের অতিঅবশ্যই দিতে হবে মেডিক্যাল টেস্ট৷ এটাই শিক্ষা দফতরের নিয়ম৷ কিন্তু মেডিক্যাল টেস্ট করাতে গিয়ে হয়রান হতে হচ্ছে জেলার একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷ সমন্বয়ের অভাবে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা৷

এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন বীরভূম ও দুই বর্ধমানের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা৷ কোন কোন টেস্ট করাতে হবে সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও গাইডলাইন নেই তাঁদের কাছে৷ তাই বেকায়দায় পড়ছেন তাঁরা৷ চিকিৎসকের পরামর্শে এক শিক্ষক এইচআিভি টেস্টও করিয়ে ফেলেছিলেন৷ পড়ে জানতে পারেন, এই টেস্ট করানের কথা চাকরির শর্তে উল্লেখই করা নেই৷

সমস্যাটা হল, পর্ষদ থেকে টেস্ট সংক্রান্ত যে চিঠি আসার কথা ছিল তা পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম জেলায় পৌঁছয়নি৷ ফলে ডিআইরাও শিক্ষকদের জানাতে পারেননি কবে এই টেস্ট হবে৷ য়ার জেরে ভুগতে হচ্ছে প্রায় ১৬০০ শিক্ষককে৷ এদিকে তাঁরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে জানতে পারেন ২ ডিসেম্বর অধিকাংশেরই টেস্ট করানোর দিন পেরিয়ে গিয়েছে৷  হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট বোর্ড গঠন করলেও পৌঁছননি শিক্ষকরা৷ ফলে এখন একসঙ্গে এতজন শিক্ষকের মেডিক্যাল টেস্ট করাতে গেলে হিমশিম খেতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও৷

বর্ধমান গোলাপবাগের কাছেই এক স্কুলের শিক্ষক জানান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে টেস্ট করানোর জন্য গিয়ছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেখানে মেডিক্যাল অফিসারকে না পেয়ে সোজা চলে যান ওপিডিতে৷ সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর তাঁকে পাঠানো হয় এক চিকিৎসকের কাছে৷ ওই চিকিৎসকের পরামর্শেই যাবতীয় টেস্ট করিয়ে ফেলেন তিনি৷ বাদ যায়নি এইচআইভি টেস্টও৷ তবে তাঁর মনে সংশয় ছিল৷ এইচআইভি করানো কি জরুরি? প্রশ্নও করেছিলেন তিনি৷ এর উত্তরে ওই চিকিৎসকের অভিমত ছিল, করিয়ে রাখুন৷ টেস্টের পর জানতে পারেন এইচআইভি পরীক্ষার কোনও দরকারই ছিল না৷ পরে নির্ধারিত ছ’টি পরীক্ষা করিয়ে ফিট সার্টিফিকেট পান ওই শিক্ষক৷

অপর এক শিক্ষককে আবার ফিট সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য তিন-চার দিন ধরে হাসপাতালের চক্কর কাটতে হয়েছে৷ যার জেরে ক্লাস অ্যাডজাস্ট করতে হয়েছে তাঁকে৷ কিছু ক্লাস আবার নষ্টও হয়েছে তাঁর৷ মেডিক্যাল টেস্ট কারানো চাকরির স্থায়ী করার অন্যতম শর্ত৷ কিন্তু এরজন্য অন ডিউটি পাওয়ার কথা তাঁদের৷ অর্থাৎ  স্কুলে না গেলেও ছুটি পাবেন তাঁরা৷ যদিও এর জন্য ডিআই-এর অনুমতি প্রয়োজন৷ কিন্তু ডিআই- এর কাছেই কোনও নির্দেশিকা পৌঁছয়নি৷ তাহলে তিনি অনুমতিই বা দেবেন কী করে? পূর্ব বর্ধমানের ডিআই শ্রীধর প্রামণিক জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত শিক্ষকদের মেডিক্যাল টেস্ট সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা তিনি পাননি৷ তবে শিক্ষাকর্মীদের মেডিক্যাল টেস্টের নির্দেশিকাটি তাঁর হাতে এসেছে৷ অন্যদিকে বুধবার বীরভূমের ডিআই লক্ষ্মীধর দাস জানান, পর্ষদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই নির্দেশিকা পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে৷ যদি দেখা যায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে টেস্ট করানোর সময় পেরিয়ে গিয়েছে, তাহলে জেলাতেই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মেডিক্যাল টেস্টের ব্যবস্থা করা হবে৷

এদিকে পর্ষদের উপসচিব পার্থ কর্মকার বলেন, দুই জেলার সমস্যার কথা শুনেছি৷ যথাসময়ে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও কেন তা ডিআই-এর হাতে পৌঁছয়নি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − ten =