মৌমিতা বিশ্বাস: সংকটে পড়া দেশের মানুষকে স্বস্তি দিয়ে বৃহস্পতিবার ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার৷ এতে বলা হয়েছে, এত দিন দেশের ৮০ কোটি মানুষ প্রতিমাসে বিনামূল্যে ৫ কেজি চাল অথবা গম পেতেন। আগামী তিন মাস পাথাপিছু অতিরিক্ত আরও ৫ কেজি চাল অথবা গম দেওয়া হবে তাঁদের। পরিবার পিছু দেওয়া হবে অতিরিক্ত ১ কেজি ডালও। কিন্তু প্রশ্ন হল শুধুমাত্র এই চাল ও ডালে দিন কাটবে তো এই ৮০ কোটি ভারতবাসীর?
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আরও বলেন, ' প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার বলে এসেছেন, তাঁর সরকার সাধারণ, দরিদ্র, বঞ্চিত, শোষিত মানুষের জন্য কাজ করবে। দরিদ্র মানুষগুলোর কথা ভেবেই এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে৷ যার মধ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে অন্ন যোজনার উপরে৷ কেউ যেন ভুখা পেট না থাকে, সেটা দেখাই কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য৷ কিন্তু আমাদের ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষাপট বিচার করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারে রোজগেরে সদস্য মাত্র একজন৷ পরিবারের সদস্য সংখ্যা কিন্তু অনেক৷ একজনের আয়ের উপরেই ভর করে তাঁদের সংসার৷ লকডাউনের ধাক্কায় সে রুজি আপাতত বন্ধ৷ নিত্যদিনের কাজে তালা ঝুলেছে৷ সংসারে দেখা দিচ্ছে অর্থের অভাব৷ সরকারের দেওয়া চাল আর ডাল ছাড়াও সংসার চালাতে লাগে আরও অন্যান্য সামগ্রী৷ সেই সব দ্রব্য কী ভাবে জোগাড় করবেন তাঁরা?
এ রাজ্যের মানুষের জন্যও বেশ কিছু প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭ লক্ষ ৮৫ হাজার মানুষকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে চাল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ এখন দু’টাকা কেজি দরে মাসে পাঁচ কেজি করে চাল পাওয়া যায় রেশন থেকে। সেই চালটাই এবার বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
প্রশ্ন রয়েছে আরও একটা বিষয়ে৷ লকডাউনের বাজারে যে ভাবে কালোবাজারি চলছে, তাতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে জিনিস পত্রের দাম৷ সবজি বাজার আগুন৷ হাত দেওয়া যাচ্ছে না মাছ-মাংসে৷ তার উপর একদল মানুষ ভবিষ্যতের আশঙ্কায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কিনে ঘর ভরাচ্ছেন৷ স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম চাহিদা৷
বাজারে আটা নেই, নুন নেই৷ দোকান দোকান ঘুরে নুনের খোঁজ করছে মানুষ৷ ক্রমে ফুরচ্ছে অন্যান্য সামগ্রীও৷ যোগান কমছে৷ চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম৷ অর্থনীতির সমীকরণে সৃষ্টি হচ্ছে মূল্য বৃদ্ধি৷ এই পরিস্থিতির সঙ্গে কী ভাবে পাল্লা দেবেন ছাপোষা মানুষের দল? সরকারি অনুদান হাতে আসার আগে পর্যন্ত কী ভাবে বেঁচে থাকবেন তাঁরা?
আগামী ১৯ দিনে পরিস্থিতি যে আরও জটিল হতে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ লকডাউন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত সমস্যা ঘুচে যাবে, সেই নিশ্চয়তা হয়তো সরকারও দিতে পারবে না৷ সংকটের এই রেশ আরও তিনমাস চলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আর্থিক সংকটের জেরে কাজ হারাতে পারেন বহু মানুষ৷ রোজগারের পথ বন্ধ হলে শুধুমাত্র সরকারের দেওয়া চাল ডালের উপর ভর করে বেঁচে থাকতে পারবে তো দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো?